ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপেনার সৌম্য সরকারকে যখন নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ডাকা হয় তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকে তার সংযুক্তি নিয়ে। অথচ এই সৌম্যর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু হঠাৎই যেন কী হলো, নিজেকে হারিয়ে ফেললেন সম্ভাবনাময় সৌম্য। তবে তার ওপর আস্থা ছিল কোচ-নির্বাচকদের। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অগাথ আস্থা ছিল এই ওপেনারের ওপর। আজ সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন সৌম্য। খেললেন ক্যারিয়ারের সেরা এক ইনিংস। জানান দিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নেলসনে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রান করেছেন ওপেনার সৌম্য। দেশের ক্রিকেটে ওয়ানডে ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লিটন দাসের ১৭৬ রানের ইনিংসটি রয়েছে এক নম্বরে। তবে একটি জায়গায় সৌম্য লিটনকে ছাড়িয়ে গেছেন। লিটনের ইনিংসটি ছিল ঘরের মাঠে। আর সৌম্য সরকারের ইনিংসটি দেশের বাইরে। অর্থাৎ দেশের বাইরে ওয়ানডে ক্রিকেটে যে কেনো বাংলাদেশি ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি এখন সৌম্যর দখলে। একইসঙ্গে শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসটিও নিয়েছেন নিজের দখলে। দুর্দান্ত এই ইনিংসের পর স্বাভাবিকভাবেই দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার আসাটাই কাম্য ছিল হয়েছেও তাই। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন এই ওপেনার। যার মধ্যে ছিল কোচ হাথুরুসিংহের পরামর্শের কথাও।
সৌম্য বলেন, ‘এরকম কোনো কিছুই না, সৌম্য সৌম্যই ছিলাম। হয়তবা সে আমাকে ভালো বুঝে এজন্য ছোট এক জিনিস বলেছে যা আমার জন্য ক্লিক করেছে। আমরা কীভাবে দেখি সেটা বড় বিষয়। একটা মানুষ হেঁটে গেলে তার মধ্যে অনেক নেগেটিভিটি পাবেন। আপনি যদি কেবল নেগেটিভি দেখতে চান নেগেটিভিটিই দেখবেন। পজেটিভ চিন্তা করলে পজিটিভ জিনিস পাবেন। হয়ত উনি পজেটিভ জিনিসটাই চিন্তা করে।’
ক্যারিয়ারে বাজে ফর্মের কারণে কম সমালোচনা ও ট্রলের শিকার হতে হয়নি এই ক্রিকেটারকে। সেই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটা সময় হয়তবা দেখতাম। এখন সত্য কথা বলতে গত প্রায় এক বছর আমার ফোনে কোনো নিউজ আসে না। আমার কোনো বন্ধু ক্রিকেট নিয়ে কথা বললে আমি তার সঙ্গে থাকি না। যে পজেটিভ কথা বলে আমি তার সঙ্গে থাকি। ভালো-খারাপ থাকবে কিন্তু খারাপ করলে তো ক্রিকেট ছেড়ে চলে যেতে পারব না যেহেতু ক্রিকেট খেলোয়াড়। ক্রিকেটের জন্যই এতদূর আসা। ক্রিকেটের জন্য পরিশ্রম করছি। ক্রিকেট নিয়েই চিন্তা করছি।’
নিজের ভালো খেলার পিছনে অবশ্য পরিবারের কৃতিত্ব দিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রথমত ধন্যবাদ দিব আমার পরিবারকে। আমার স্ত্রীকে। সে সব সময় সমর্থন জুগিয়েছে। আর সতীর্থরা তো আছেই। হাথু আসার পর তার সঙ্গে যতটুকু ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে সে অনেক সমর্থন জুগাচ্ছে এবং ছোট ছোট জিনিস ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ভালোর জন্য।’
পরে সেঞ্চুরি কবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরের ম্যাচেই হতে পারে (সেঞ্চুরি)। আফসোস বলতে… অবশ্যই যেদিন জাতীয় দলে প্রবেশ করি- চাই নাই আর বের হবো। এখন থেকেই অবসরে যাব এটাই তো ইচ্ছা থাকে সবার। কখনো নিজের থেকে খারাপ খেলতে চাই নাই। তো চাইব যে আগামীতেও এইভাবে কন্টিনিউ করতে পারি। যতটুকু পারি চেষ্টা করব এগিয়ে যাওয়ার।’
মন্তব্য করুন