চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে আসার পরও বিদায়ে পাকিস্তান জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। গ্রুপ পর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের আগাম বিদায়ের পর দলের পারফরম্যান্স এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে কোচ গ্যারি কারস্টেনের কড়া সমালোচনা প্রকাশ্যে এসেছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডের সাথে শেষ ম্যাচের পর দলীয় সভায় কারস্টেন এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভারতকে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচ পাকিস্তান দলের মধ্যে সঙ্গতি না থাকায় হতাশ হয়েছেন। জিও সুপার নিউজ এবং এক বিশিষ্ট পাকিস্তানি ক্রীড়া সাংবাদিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারস্টেন বলেন, ‘ পাকিস্তান দলের মধ্যে কোনও ঐক্য নেই। তারা এটিকে একটি দল বলে, কিন্তু এটি আসলে একটি দল নয়। তারা একে অপরকে সমর্থন করছে না; সবাই আলাদা আলাদা। আমি অনেক দলের সাথে কাজ করেছি, কিন্তু এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।’
‘পাকিস্তান দলের মধ্যে কোনও ঐক্য নেই। তারা এটিকে একটি দল বলে, কিন্তু এটি আসলে একটি দল নয়। তারা একে অপরকে সমর্থন করছে না; সবাই আলাদা আলাদা। আমি অনেক দলের সাথে কাজ করেছি, কিন্তু এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।’
কারস্টেনের এই মন্তব্য পাকিস্তান ক্রিকেট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সাধারণত শান্ত স্বভাবের কারস্টেনের এই তীব্র সমালোচনা দলের সমস্যার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। শুধুমাত্র দলীয় ঐক্য নয়, কারস্টেন খেলোয়াড়দের ফিটনেস, দক্ষতা এবং কৌশলগত সচেতনতা সম্পর্কেও সমালোচনা করেছেন।
তিনি দলকে বলেন, ‘কেউ জানে না কোন শট কখন খেলতে হবে,’ এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে শুধুমাত্র যারা উন্নতি করবে তারাই দলে থাকবে।
কারস্টেনের এই অপ্রত্যাশিত বক্তব্য পাকিস্তান ক্রিকেটের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বিশ্লেষকরা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) কে দোষারোপ করেছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের অস্থিরতা এবং খেলোয়াড়, কোচ এবং অধিনায়কের ক্রমাগত পরিবর্তনকে দলের পতনের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তান দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ক্রিকেটীয় দক্ষতা হারাতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছানো এবং ২০২২ সালে ফাইনালে ওঠা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স হতাশাজনক। ভারতের সাথে একসময়ের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সম্প্রতি একপেশে হয়ে উঠেছে, যা পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্তদের মনোবলকে আরও নিচে নিয়ে গেছে।
পরিবর্তনের জন্য জোরালো দাবি উঠছে। কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম পুরো সিস্টেমের পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। কারস্টেনের এই কঠোর বিশ্লেষণ প্রকাশ্যে আসার পর, পিসিবির উপর সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ তীব্রতর হয়েছে।
কারস্টেন দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাচ্ছেন, আর পাকিস্তান ক্রিকেট দল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। খেলোয়াড়রা ছুটিতে যাচ্ছে, কেউ কেউ পাকিস্তানে ফিরছেন এবং অধিনায়ক বাবর আজম সহ অনেকে যুক্তরাজ্যে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আশা করা যায়, এই অস্থির সময়ে পিসিবি প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে নিয়ে যাবে, যা পাকিস্তান ক্রিকেটকে তার বর্তমান দুর্দশা থেকে উত্থিত করতে সহায়ক হবে।
মন্তব্য করুন