৩০ এপ্রিল সহকারী রেফারির হাত থেকে ফ্লাগ কেড়ে নিয়ে রেফারিকে ছুড়ে মারার ঘটনার তিন দিন পর বোতল ছুড়ে মারা হয় রেফারিকে। সে ঘটনার ৬ দিন পর রেফারিকে মাঠে ফেলে বেদম পেটানো হলো। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ এখন রেফারিদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে!
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেশাদার ফুটবল কাঠামোর দ্বিতীয় স্তরের এ লিগে বিশৃঙ্খলা। তাতে আতঙ্কিত রেফারিরা। রেফারিজ কমিটি না থাকায় নিরাপত্তা চেয়ে রেফারিদের পক্ষ থেকে সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারকে।
ওপরে উল্লিখিত তিন ঘটনার প্রথমটি ছিল ৩০ এপ্রিল, পিডব্লিউডি-ফরাশগঞ্জ ম্যাচে। ৭১ মিনিটে পিডব্লিউডি গোল করে। ফরাশগঞ্জ ডাগআউট থেকে অফসাইডের কারণে গোল বাতিলের দাবি করা হয়। কিন্তু রেফারি নাজমুল হুদা নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পরে ফরাশগঞ্জের পেনাল্টির দাবি উপেক্ষা করেন এ রেফারি। অশোভন আচরণের কারণে পুরান ঢাকার ক্লাবটির দলনেতা দেলোয়ার হোসেনকে লালকার্ড দেখানো হয়। এসব ঘটনায় ম্যাচের পর বোতল ছুড়ে মারেন ফরাশগঞ্জের ডিফেন্ডার মো. রাকিব, যা গিয়ে রেফারি নাজমুল হুদার মাথায় লাগে।
এ প্রসঙ্গে রেফারি নাজমুল হুদা কালবেলাকে বলেন, ‘অফসাইডের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, সেটা ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার। আমি ফরাশগঞ্জের কর্মকর্তাদের বারবার বলছিলাম, আপনার শান্ত থাকুন। কিন্তু দলনেতা দেলোয়ার হোসেন বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন। এ কারণে তাকে লালকার্ড দেখানো হয়। এ নিয়ে ম্যাচের পর বোতল ছুড়ে মারা হয়। যাবতীয় বিষয় রেফারির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’
পিডব্লিউডি-ওয়ারী ক্লাবের ম্যাচে জটিলতার সূত্রপাত প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে হওয়া গোল থেকে। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ওয়ারী ক্লাবের করা গোলের কারণে অতিরিক্ত তিন মিনিটের সঙ্গে আরেক মিনিট যোগ করা হয়েছিল। ওই সময়ে পেনাল্টি পায় পিডব্লিউডি। এ নিয়ে চড়াও হন ওয়ারী ক্লাবের মিডিয়া অফিসার করিব উদ্দিন সরকার। এক সমর্থক রেফারিকে উদ্দেশ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন, সহকারী রেফারির হাত থেকে ফ্লাগ কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারেন কবির উদ্দিন সরকার।
বিষয়গুলো ম্যাচ কমিশনার ফেরদৌস আহমেদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি কালবেলাকে বলেছেন, ‘বিধিবহির্ভূত কিছুই হয়নি ম্যাচে। কিন্তু ওই ঘটনা নিয়ে যা হয়েছে, তা দুঃখজনক! কারণ রেফারি এবং তাদেরও সামাজিক এবং পারিবারিক জীবন আছে। সমস্ত বিষয় ম্যাচ কমিশনারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’
ওপরের দুটি ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে বাফুফে এলিট একাডেমি ও সিটি ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচের ঘটনা। ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচের পর সিটি ক্লাবের খেলোয়াড়, সমর্থক, কর্মকর্তারা মিলে বেদম প্রহার করেন রেফারি জি এম চৌধুরী নয়নকে। তার আগে জসিম আক্তার ও রিতু রাজও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ম্যাচ পরিচালনা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। নানা ঘটনার পর সকলের দৃষ্টি এখন বাফুফের দিকে। কম্পিটিশনস কমিটি, লিগ্যাল কমিটি হয়ে ওপরের ঘটনাগুলোর রেফারি এবং ম্যাচ কমিশনারের প্রতিবেদ ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে রয়েছে।
এ অবস্থায় ঘটনাগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে সম্মত হননি বাফুফে কর্মকর্তারা। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। একদিকে সম্মানীর জন্য নিয়মিত দেনদরবার করতে হয়, অন্যদিকে ধারাবহিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন রেফারিরা। দুয়ের যোগফল দেশের রেফারিং সেক্টরের জন্য মোটেও মঙ্গল বয়ে আনবে না।
মন্তব্য করুন