স্পেনের লা লিগার ক্লাব রিয়াল বেতিসে ধারে খেলে অ্যান্টনি এখন যেন এক প্রকার নায়ক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হতাশাজনক সময় পেছনে ফেলে তিনি এখন বেতিস সমর্থকদের চোখের মণি। এমনকি ক্লাব ক্যাপ্টেন ইস্কো ইনস্টাগ্রামে রসিকতা করে বলেছেন, ‘তোমাকে অপহরণ করে রাখব, এটা প্রথম সতর্কবার্তা!’ সাবেক তারকা জোয়াকিনও যোগ দিয়েছেন কৌতুকে, ‘প্রয়োজনে আমি গাড়ি চালাব, যেভাবেই হোক ওকে থাকতে হবে!’
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ধারে স্পেনে আসার পর বদলে গেছে বেতিসের মৌসুম। তখন তারা লা লিগায় ছিল নবম স্থানে, এখন তারা শেষ করেছে ছয় নম্বরে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে দলটি—কনফারেন্স লিগের ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে চেলসির।
২৫ ম্যাচে বেতিসের জয়ে অ্যান্টনির অবদান অবিশ্বাস্য। দল জিতেছে ১৩টি, ড্র করেছে ৮টি, হার মাত্র ৪টি। সেই সময়ের মধ্যে ৫১ গোল করেছে তারা, যার ১৪টিতে সরাসরি ভূমিকা ছিল ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার অ্যান্টনির—৯টি গোল, ৫টি অ্যাসিস্ট। ফিওরেন্টিনার বিপক্ষে সেমিফাইনালের দুই লেগেই গোল করেন তিনি, দ্বিতীয় লেগে ফ্রি-কিকে গোল করে এবং একটি গোলের অ্যাসিস্ট দিয়ে দলকে পৌঁছে দেন ফাইনালে।
স্প্যানিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ গুইলেম বালাগুয়ের মতে, ‘অ্যান্টনি এখন বেতিসে একজন বীর। সেভিয়ার মতো জায়গায় এমন সাহসী খেলোয়াড়ের কদর বেশি। ইউনাইটেডে আমরা যাকে ঠান্ডা মেজাজে দেখেছি, বেতিসে এসে আমরা তাকে কাঁদতে, হাসতে দেখেছি—এটাই তো ভালোবাসার জায়গা।’
ম্যান ইউনাইটেডে এসে অ্যান্টনির শুরুটা মন্দ ছিল না। এরিক টেন হাগের অধীনে তিন মৌসুমে তিনি খেলেছেন ৯৬টি ম্যাচ, করেছেন ১২টি গোল। তবে গত মৌসুমে বেঞ্চে সময় কেটেছে বেশি। তাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অ্যান্টনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আর নিতে পারছিলাম না। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছিলাম। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতাম, ঘর থেকে বের হতাম না।’
অবশ্য সেই অন্ধকার থেকে তাকে টেনে তুলেছে ফুটবল আর বেতিসের ভালোবাসা। আজ তিনি বলতেই পারেন— ‘আমি আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছি। এখন আমি সত্যিই সুখী।’
তবে প্রশ্ন একটাই—বেতিস কি তাকে স্থায়ীভাবে রাখতে পারবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনাইটেড ৫০ মিলিয়ন ইউরোর নিচে ছাড়বে না, যা বেতিসের সাধ্যের বাইরে। তাছাড়া নতুন কোচ রুবেন আমোরিমের সিস্টেমেও হয়তো ফিট নন অ্যান্টনি। অর্থাৎ, বেতিস সমর্থকদের হয়তো বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
তবু একটা ব্যাপার নিশ্চিত—এই কয়েক মাসে অ্যান্টনি যা দিয়েছেন, তা ভোলার নয়। সেভিয়ার মাটিতে, রিয়াল বেতিসে, "অ্যান্টনিও অব ত্রিয়ানা" এখন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
মন্তব্য করুন