

যেই মাঠে সাদা জার্সিতে পৌঁছেছিলেন নিজের পতনের গভীরে, ঠিক সেই সান মামেসেই লেখা হলো কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রত্যাবর্তনের গল্প। ‘লা ক্যাথেড্রাল’ আবার সাক্ষী রইল ফরাসি তারকার—দুটি গোল আর একটি অ্যাসিস্টে মোড়া এক অনবদ্য রাতের, যেখানে মৌসুমের সেরা দলগত পারফরম্যান্সে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে ৩–০ গোলে উড়িয়ে দিল রিয়াল মাদ্রিদ।
এই জয় শুধু স্কোরলাইনের নয়, ছিল আত্মবিশ্বাস ফেরানোরও। সাম্প্রতিক হতাশা আর সন্দেহে ভর করা জাবি আলোনসোর প্রকল্প যেন সান মামেসেই নতুন অক্সিজেন পেল। ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এমবাপ্পে যেন নিজেকে মুক্ত করলেন—গতি, শক্তি আর নিখুঁত ফিনিশিংয়ে।
ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নেয় রিয়াল। শারীরিকভাবে শক্ত মিডফিল্ডে জুড বেলিংহাম ছিলেন আক্রমণাত্মক ও বক্স-টু-বক্স ভূমিকায়, ক্যামাভিঙ্গা ও ভালভের্দে ভারসাম্য গড়ে দেন দুই প্রান্তে। অ্যাথলেটিক চেষ্টা করলেও আক্রমণে তাদের বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর যখনই সুযোগ এসেছে—থিবো কোর্তোয়া ছিলেন অটল প্রাচীর।
প্রথম গোলটিই রাতের সুর বেঁধে দেয়। ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের লম্বা পাস বুকে নামিয়ে লেকুয়োকে কাটিয়ে, লাপোর্তেকে ফাঁকি দিয়ে কাছের পোস্টে বজ্রগতির শটে বল জালে জড়ান এমবাপ্পে—একেবারে রোনালদো-স্টাইল। উনাই সিমন কোনো সুযোগই পাননি।
অর্ধের আগে আরেকটি দলগত মুভে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়। ডান দিক থেকে ট্রেন্টের ক্রসে এমবাপ্পের হেড-ব্যাক, আর সেখানে অপেক্ষমাণ ক্যামাভিঙ্গার নিখুঁত ফিনিশ—২–০। রিয়ালের ‘কিলার ইন্সটিংক্ট’ ঠিক এমনই হওয়া উচিত—বার্তা দিয়ে গেল এই গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বিলবাও। বেরেঙ্গের ওয়ান-অন-ওয়ানে কোর্তোয়ার অসাধারণ সেভ না হলে ম্যাচ অন্যদিকে মোড় নিতে পারত। নিকো উইলিয়ামসও ঝাঁপান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিয়ালই ছিল বেশি পরিণত।
ম্যাচের চূড়ান্ত আঘাত আসে এমবাপ্পের দ্বিতীয় গোলে। দূর থেকে বাঁকানো শক্তিশালী শটে ৩–০, খেলা কার্যত শেষ।
তবে আনন্দের মাঝেও দুঃসংবাদ ছিল। ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড ও এদুয়ার্দো ক্যামাভিঙ্গা—দুজনই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন, যা সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শেষদিকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বদল নিয়েও খানিক উত্তেজনা তৈরি হলেও ম্যাচ আর উত্তপ্ত হয়নি।
ট্রাইব্যুন ফাঁকা হতে শুরু করে আগেই—পরাজয় মেনে নেওয়ার নীরব স্বীকৃতি। রাত শেষ হয় একটাই বাক্যে: রিয়াল মাদ্রিদ চাইলে এমনই খেলতে পারে।
মন্তব্য করুন