দুই হাতের বেশিরভাগ অংশই কাটা। তারপরও সমুদ্রের নীল জলরাশিতে ছুটে চলাই তার নেশা। উত্তাল ঢেউয়ে সার্ফিং বোটে চেষ্টা করেন ঝড় তোলার। কিন্তু হাত-পাবিহীন সারাহ আলমাগ্রোর লড়াইটা এখন বেশ কঠিন। তারপরও ২৩ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী এই স্প্যানিশ সার্ফার ছুঁতে চান তার স্বপ্ন। আলিঙ্গন করতে চান সাফল্যের দ্যুতি।
অথচ পাঁচ বছর বয়স থেকে সার্ফিং শেখা শুরু আলমাগ্রোর। এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের লক্ষ্যে। ১৮ বছর বয়সে হঠাৎ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হওয়ায় কেটে ফেলতে হয় তার দুই হাত ও দুই পা। ভেস্তে যায় সার্ফার হওয়ার স্বপ্ন। তবে হুইল চেয়ার ছেড়ে আবার সমুদ্রে নামা সেই আলমাগ্রোই এখন অনেকের কাছে আইডল।
সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সারাহ এ প্রসঙ্গে জানান, ‘না, আমি এভাবে জন্মগ্রহণ করিনি। আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমি মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হই। অথচ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেও আমি বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করেছি। একদিন পরই খারাপ অনুভব করতে শুরু করি। প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও বমি লাগছিল। ভেবেছিলাম এটি সার্ফিং কিংবা কাজের ব্যস্ততার কারণে হয়েছে। তবে হাসপাতালে যাওয়ার পর বুঝতে পারি কী হয়েছে আমার। আমার দুই হাত ও দুই পা কেটে ফেলা হয়। দীর্ঘ পাঁচ মাস হাসপাতালে থাকার পর হুইলচেয়ারে বাসায় ফিরি। যা ছিল খুব দুঃসহ।’
আলমাগ্রো পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। গ্রাজুয়েশন করছেন আইনশাস্ত্র নিয়ে। কৃত্রিম হাত-পা নিয়েও স্পেশাল ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন রৌপ্য পদকও। এ প্রসঙ্গে সারাহ বলেন, ‘এখন আমার দুই হাত ও দুই পা সবই কৃত্রিম। বাবার কিডনি আমার শরীরে। মজার বিষয় হলো, এমন অবস্থায় স্পেনের হয়ে অংশ নিয়েছিলাম স্পেশাল সার্ফ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানে রৌপ্য পদকও জিতি। যা ছিল আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও অকল্পনীয়।’
প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে স্পেশাল কিছু। তাদের একটু বেশিই সুরক্ষা দেয় যে কোনো দেশের সরকার। আলমাগ্রোর দর্শন অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। তার মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অতিরিক্ত সুরক্ষিত থাকে, যা আমি ঘৃণা করি। আমি সাহায্য না চাইলে আপনি কেন সাহায্য করতে আসবেন। আপনি তখনই সাহায্য করবেন, যখন আমি বলব, তার আগে নয়।
জীবনে আলমাগ্রোর স্বপ্নটা কী। তা জানাতে গিয়ে প্যারা অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার কথাই জোর দিয়ে বললেন স্প্যানিশ এই তরুণী। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলায় আমার লক্ষ্য আবার স্পেনের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। দেখা যাক এ বছরই সেটা পারি কি না। গত বছর স্বর্ণজয়ের খুব কাছে গিয়েও পারি নাই। শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল ছিলাম। আমার স্বপ্ন, প্যারা অলিম্পিকে অংশ নেয়া। আশা করি ২০২৮ সালে সেটি করে দেখাতে পারব।’
মন্তব্য করুন