কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রতিটি ডিভাইসে কর দিবে স্টারলিংক, থাকছে না রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল 

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ তৈয়্যব আহমদ। ছবি : কালবেলা
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ তৈয়্যব আহমদ। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক। মঙ্গলবার (২০ মে) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এমন তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যব আহমদ।

তিনি জানান, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রতিটি ডিভাইসের ওপর মাসিক এক মার্কিন ডলার কর পরিশোধ করবে কোম্পানিটি। তবে স্টারলিংকের জন্য প্রচলিত কোম্পানিগুলোর মতো রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংকের প্রাইসিং ও সেটাপের দামের কারণে এর ব্যাপ্তি তেমন হবে না।

এদিকে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার (২০ মে) স্টারলিংক চালু নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ তৈয়্যব জানান, বাংলাদেশে স্টারলিংকের যেসব ডিভাইস থাকবে সেগুলোতে রোমিং সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে স্থানীয় আইএসপিদের ব্যবসায় বেশি প্রভাব ফেলবে না। এ ছাড়া প্রতিটি ডিভাইস শেয়ার করা যাবে, যার ফলে তা উদ্যোক্তাবান্ধব হবে। দামের ব্যাপারে ফয়েজ তৈয়্যব জানান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম কিছুটা কম। তাছাড়া পরবর্তীতে দাম নির্ধারণের জন্য বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে বলেও জানান ফয়েজ তৈয়্যব।

তিনি বলেন, যেহেতু এটি শেয়ার করা যাবে এবং কোনো সীমা থাকবে না, আমরা আশা করছি শেয়ারিংয়ের ফলে গ্রাহকদের ওপর দাম কিছুটা কমে আসবে। স্টারলিংকে যেহেতু বিল্টইন রাউটার আছে সেহেতু রাউটার হতে রাউটারে আইএসপি সেটাপেও ব্যবহার সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, যার ১০ দিন গত হয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেই তাদের লোকাল গেটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স আছে। তাই প্রতিটি ডিভাইসের বিষয়ে এনওসি নিতে হবে।

গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তারা কীভাবে এর সুবিধা পেতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলো চাইলে ওয়াইফাই লেডি হিসেবে নতুন একটা উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি করতে পারে। তারা চাইলে শুধুমাত্র গ্রামীণ মহিলাদের একটা বিশেষ ঋণ দিতে পারে, যে ঋণের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা স্টারলিংক নিয়ে ইন্টারনেট সেবা বিক্রয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভবন ছাড়াও ইনফরমাল কো-ওয়েবিং বিজনেসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন।

এ সময় বাংলাদেশে স্টারলিংকের পরিবেশক হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানিকে রাখা হবে বলে জানান ফয়েজ তৈয়্যব। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সাবমেরিক ক্যাবল কোম্পানির মাধ্যমেও স্টারলিংক ব্যবসা করবে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অন‍্যান‍্য দেশের কিছু কোম্পানি যেমন আমাজন কুইপার, টেলিস্যাট, ওয়ানওয়েব (ইউকে) বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী। তারা এখানে ব‍্যবসা করলে তাদেরও একই রকম পলিসি সুবিধা দিতে প্রস্তুত।

স্টারলিংক সেবা চালু হলেও তা আইএসপি ব্যবসায় তেমন প্রভাব পরবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক কালবেলাকে বলেন, যেহেতু এটা একটা নতুন টেকনোলজি এটিকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। তবে আবাসিক ও বড় করপোরেট পর্যায়ে আমাদের গ্রাহক হারানোর তেমন সম্ভাবনা নেই। হতে পারে মাঝারি মানের করপোরেট গ্রাহক কিছুটা কমতে পারে স্টারলিংকের জন্য। বড় কোম্পানিগুলো স্টারলিংকে ব্যাকআপ হিসেবে রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইএসপিএবির নবনির্বাচিত মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞাঁ কালবেলাকে বলেন, স্টারলিংক প্রান্তিক পর্যায়ে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। আইএসপিগুলোর বড় গ্রাহক পর্যায়ে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেটাপ ও মাসিক চার্জ যা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে প্রান্তিক পর্যায়ের এক সম্প্রসারণ অনেকটা কঠিন। তাছাড়া যেসব এলাকায় মোটামুটি মানের ব্রডব্যান্ড রয়েছে সেসব এলাকায় আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এই ব্যয় অনেকটা বেশি। তাছাড়া বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের সংযোগের জন্য উচ্চগতির ব্রডব্যান্ডের ওপরই নির্ভরশীল থাকবে, সেক্ষেত্রে তারা স্টারলিংকে ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

বাংলাদেশে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করছে। এগুলো হলো- স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। রেসিডেন্স প্যাকেজে মাসিক খরচ পরবে ছয় হাজার টাকা এবং রেসিডেন্স লাইটে খরচ পরবে চার হাজার ২০০। তবে সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে পাশাপাশি শিপিং ও হ্যান্ডেলিং চার্জ দুই হাজার ৮০০ টাকাসহ মোট ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হবে। এখানে কোনো স্পিড ও ডাটা লিমিট নেই। প্রতিটি সংযোগে ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করা যাবে।

বাংলাদেশের গ্রাহকরা সরাসরি স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ডিভাইস অর্ডার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে নিজের ঠিকানা দিয়ে একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিয়ে হার্ডওয়্যার কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিটি স্টারলিংক সংযোগের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কিটে থাকবে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও ক্যাবল। এটি প্লাগ অ্যান্ড প্লে মডেলে চালানো যাবে। প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়ে স্যাটেলাইট ডিশটি ফাঁকা জায়গায় আকাশের দিকে মুখে করে স্থাপন করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভাতা নিচ্ছে ২৪০০ কোটি টাকা

স্বাধীনতার পর থেকে কোন বাজেট কত টাকার

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্তির দাবি টিআইবির

বিয়েবাড়ির গল্পে ফারহান-আয়মান

সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান

ছাত্রদল নেতার গুদামে ৫৬ বস্তা ভিজিএফের চাল

সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়ংকর ফাঁদে তরুণরা

জবি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি, গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন

১০

ঝড়ের কবলে দিল্লিগামী ফ্লাইট, আতঙ্কিত যাত্রীরা

১১

সিনহা হত্যা : ন্যায়বিচারে সন্তুষ্ট পরিবার, রায় কার্যকরের আহ্বান

১২

নির্বাচনে যারা বিশ্বাস করে না, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় : নিতাই রায়

১৩

আখাউড়ায় ১৯ গ্রাম প্লাবিত

১৪

শেখ হাসিনার দেশে আসার আর কোনো সুযোগ নেই : মোস্তফা জামান 

১৫

হঠাৎ অবসর নিলেন ম্যাক্সওয়েল

১৬

মহানবী (সা.) হালাল প্রাণীর যেসব অঙ্গ খাওয়া অপছন্দ করতেন

১৭

শাকিব খানের সঙ্গে ছবি দিয়ে ভালোবাসা জানালেন মিষ্টি 

১৮

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত

১৯

ইয়ামালকে হারিয়ে সেরা উদীয়মান ফুটবলার হলেন পিএসজির দুয়ে

২০
X