শিশুদের মধ্যে মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে, যা মূত্রনালির বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে—বিশেষ করে ব্লাডার বা কিডনিতে। অনেক সময় শিশুদের মধ্যে এই সংক্রমণের লক্ষণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, তাই অভিভাবকদের সচেতন থাকা জরুরি।
সঠিক সময়ে চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে এটি কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই শিশুদের সুস্থ রাখতে এই সংক্রমণ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
২টি কিডনি: রক্ত পরিষ্কার করে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য দিয়ে প্রস্রাব তৈরি করে
২টি ইউরেটার: প্রস্রাব কিডনি থেকে ব্লাডারে নিয়ে যায়
ব্লাডার (মূত্রাশয়): প্রস্রাব জমা রাখে
ইউরেথ্রা: ব্লাডার থেকে প্রস্রাব শরীরের বাইরে নিয়ে যায়
যখন ব্যাকটেরিয়া ইউরেথ্রা দিয়ে মূত্রনালিতে প্রবেশ করে, তখনই UTI হয়।
সিস্টাইটিস (Cystitis): ব্লাডারে সংক্রমণ
পাইলোনেফ্রাইটিস (Pyelonephritis): সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে
দুই ধরনের সংক্রমণই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ভালো হয়, তবে কিডনির সংক্রমণ বেশি গুরুতর এবং জটিলতা তৈরি করতে পারে যদি চিকিৎসা না করা হয়।
UTI সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এই ব্যাকটেরিয়া বেশিরভাগ সময় পায়ুপথ বা যৌনাঙ্গের আশপাশের ত্বক থেকে আসে। সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া হলো E. coli, যা অন্ত্রে থাকে এবং সেখান থেকে ইউরেথ্রায় পৌঁছে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : বাঙালিদের কাছে আলু কেন এত জনপ্রিয়
আরও পড়ুন : একটিমাত্র ভুলে চা হয়ে যায় বিষ
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
- মেয়েশিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে টয়লেট ট্রেনিং শুরু করার সময়।
- ১ বছরের কম বয়সী অখৎনা করা ছেলেরা কিছুটা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
এ ছাড়া কিছু বিশেষ কারণ UTI-এর ঝুঁকি বাড়ায়:
- মূত্রনালির গঠনগত সমস্যা বা ব্লকেজ
- ইউরিন প্রবাহে অস্বাভাবিকতা
- জন্মগত সমস্যা যেমন প্রস্রাব পেছনে ফিরে যাওয়া (vesicoureteral reflux)
- মেয়েশিশুদের বুদবুদের পানিতে গোসল
- টাইট জামা-কাপড়
- ভুলভাবে পেছন থেকে সামনে মোছা
- টয়লেটের ব্যবহার বা পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস ঠিক না থাকা
- দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখা
লক্ষণ নির্ভর করে সংক্রমণের মাত্রা ও শিশুর বয়সের ওপর। অনেক ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ স্পষ্ট নাও হতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু লক্ষণ—
- জ্বর
- খেতে না চাওয়া
- বমি বা ডায়রিয়া
- বিরক্ত বা অস্থির থাকা
- অসুস্থ বোধ করা
যদি ব্লাডারে সংক্রমণ হয়, তাহলে লক্ষণগুলো হতে পারে—
- প্রস্রাবে রক্ত
- ঘোলা বা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
- প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা
- তলপেটে চাপ বা ব্যথা
- বারবার প্রস্রাব লাগা
- রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রস্রাব করা
- টয়লেট ট্রেনিং-এর পরও প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা
আরও পড়ুন : সময় না থাকলেও পুরুষদের জন্য কেন ব্যায়াম করা জরুরি
আরও পড়ুন : গায়ে রোদ লাগান কতটা উপকারী ?
যদি সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে, তবে লক্ষণগুলো আরও তীব্র হয়—
- খুব বেশি জ্বর, ঠান্ডা লাগা
- ত্বক লালচে বা গরম
- বমি বা বমি বমি ভাব
- পেট বা পেছনে তীব্র ব্যথা
- অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি
শিশুরা তাদের অসুস্থতা ভালোভাবে বোঝাতে পারে না। তাই যদি আপনার শিশুর জ্বর থাকে কিন্তু ঠান্ডা, কানের ব্যথা বা অন্য কারণ না থাকে—তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে UTI থেকে গুরুতর সমস্যা হতে পারে, যেমন—
কিডনিতে পুঁজ (abscess)
কিডনি ক্ষতি বা কাজ না করা
কিডনি ফুলে যাওয়া (hydronephrosis)
সেপসিস (রক্তে সংক্রমণ ছড়ানো), যা অঙ্গ বিকল বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে
আপনার শিশু যেন UTI-তে না ভোগে, সেজন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখুন
- মেয়েশিশুদের বুদবুদে পানিতে গোসল করাবেন না
- টাইট জামা বা আন্ডারওয়্যার পরানো এড়িয়ে চলুন
- শিশু যেন পর্যাপ্ত পানি পান করে, তা নিশ্চিত করুন
- ক্যাফেইন (যেমন চা বা কোলা) থেকে দূরে রাখুন
- ছোট শিশুদের নিয়মিত ডায়াপার পরিবর্তন করুন
- বড় শিশুদের ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে শেখান
- শিশু যেন দীর্ঘ সময় প্রস্রাব না আটকে রাখে, তা বোঝান
- সঠিকভাবে মুছতে শেখান—সামনে থেকে পেছনে
যদি আপনার শিশুর বারবার UTI হয়, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলেও এতে বারবার সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রমাণ খুব শক্তিশালী নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সবচেয়ে ভালো।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সচেতন থাকুন, শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করুন।
মন্তব্য করুন