‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নারী সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করেছে। দিবসটি ঘিরে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), নারীপক্ষসহ ৪৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস কমিটি’ পৃথক আয়োজ করেন।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এবছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুই হাজার ৫৭৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭টি। এ ছাড়া অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক অভিঘাতের কারণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। বাংলাদেশ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।
রেখা সাহা বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, উন্নয়ন সংগঠন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, নারী আন্দোলন বহুমাত্রিক কাজ করলেও নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর সাথে বাড়ছে বর্বরতার ধরন। এসব পরিস্থিতির উত্তরণে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ‘সমন্বিত বিনিয়োগ’ দরকার।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে সহসভাপতি রেখা চৌধুরী ও শাহানা কবির, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে শাহবাগ চত্বরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। বিএনপিএসর পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় সমাবেশে মূল আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএসর ইয়ুথ গ্রুপের প্রতিনিধি মাহমুদা আকন্দ।
নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর নিবাহী পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর।
এসময় মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, দেশবাসী অতীতে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠী এবং নারী ও মেয়েদের প্রতি বীভৎস নির্যাতনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখেছে। এ ব্যাপারে আমরা বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি যাতে নারী ও সংখ্যাল্প জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মনিরুজ্জামান মুকুল, নারীনেত্রী মাসুদা রওশন, ঢাকা (পূর্ব) কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শেলিনা পারভীন, ঢাকা (পশ্চিম) কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. হেলালউদ্দিন, স্কুলছাত্রী পুষ্পিতা, রাশেদা প্রমুখ।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) নারীপক্ষের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের আহ্বান জানান বাদাবন সংঘের মাহমুদা হৃদি। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষের ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা মনীষা মজুমদার। যুদ্ধে নিহত সকল ফিলিস্তিনির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের শোকার্ত পরিবারবর্গ ও নিকটজনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে এক মিনিট নীরববতা পালন করা হয়। পরে নাচ, কবিতা, গান ও স্লোগানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
৪৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস কমিটি ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারীর ওপর সহিংসতার আশঙ্কা : প্রতিরোধ গড়ুন, প্রতিবাদ করুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে। ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের জাতীয় নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (দুর্বার) এর মাধ্যমে মোট ৬০ জেলায় দিবসটি পালন করা হয়।
মন্তব্য করুন