ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের 'দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্সের' মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে কনফারেন্সের উদ্বোধন করলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর।
ফ্লোরাল প্রিন্টের জর্জেট শাড়ি, কালো কার্ডিগ্যান পরা উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের মুখে স্মিত হাসি আর ব্যক্তিত্বে আলোকিত হয়ে উঠেছিল মঞ্চ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ভারতের অভিনয় জগতে পরিবর্তন এসেছে। ওটিটি প্লাটফর্ম , থিয়েটারে পুরুষ অভিনেতারা অনেক বেশি জনপ্রিয়। মার্শাল আর্টেও পুরুষদের আধিপত্য বেশি। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, নারী অভিনেতারা এসব জায়গায় পিছিয়ে রয়েছে। ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের ৩য় তলায় রবিবার ও সোমবার দুদিনব্যাপী ( ২১ ও ২২ জানুয়ারি) উৎসবের অংশ হিসেবে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক 'দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স' এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগের সহযোগিতায় এই আয়োজনের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রয়েছে ইউএনডিপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উৎসবের সভাপতি কিশওয়ার কামাল। অনুষ্ঠানটি চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কিশওয়ার কামাল সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া. বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া’। এখানে নিজের কথা শোনার জন্য নিজের থেকে বাইরে এসে নিজেকে অনুভব করতে হবে।
এই কনফারেন্সের তিনটি সেশনের প্রথম সেশনে ভারতের কলকাতার সেন্ট জোসেফ কলেজের ম্যাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান ড. ঈপ্সিতা বারাত নেভিগেটি ডুয়াল আইডেন্টিটিটিস, এন এক্সপ্লোরেশন অফ ইন্টারসেকশনালিটি ইন মাদারহুড এন্ড ফিল্মমেকিং বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দ্বৈত পরিচয়ে নেতিবাচক দিক - মাতৃত্ব এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে ইন্টারসেকশ্যালিটির অন্বেষণ করেছেন তার প্রবন্ধে। ড. ঈপ্সিতা বারাত ভারতের পাঁচ নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারাহ খান, অপর্ণা সেন, কঙ্কনা সেন শর্মা, নন্দিতা দাস, কিরন রাও শৈশব, মাতৃত্ব, পারিবারিক জীবনের সঙ্গে ক্যারিয়ারকে ব্যালেন্স করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো সামাল দিয়েছেন তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের জীবনটা একটা চলচ্চিত্র। ঘর সামলিয়ে তারা কাজ করছেন। এই প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ম্যাস কমিউনিকেশন রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক ড. সোহিনী ঘোষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আমীন, বিস্তার চিটাগাং আর্টস কমপ্লেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলম খোরশেদ। সেশনটি পরিচালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
আলোচকরা ভারতের বাংলা ও হিন্দি সিনেমার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজের পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীমা আখতার , সামিয়া জামান , শবনম ফারিয়ার কাজের কথাও তুলে ধরেন।
দ্বিতীয় সেশনে স্টিয়ারিং থ্রো দ্য সিনিসটার হুইসপার অব মর্ডারিনিটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্সার ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন সিরিজ রিভিউয়ার সামারাহ জান্নাতি জামাল। তার প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন শ্রীলংকার সিশন জার্নালিস্ট অনুরুদ্ধ কোদাগোদা, ব্রাসেল বেলজিয়ামের ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার অঞ্জা স্ট্রিলি। সেশনটি পরিচালনা করবেন একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
তৃতীয় সেশনে দ্য রোল অব কনটেম্পোরারি সিনেমা ইন এমপাওয়ারিং ইয়াংগ গার্লস : এ ক্রিটিক্যাল এনালাইসিস অব ফিল্মস দ্যাট ইন্সপায়ার কনফিডেন্স, এমবিশন এন্ড রেসিলিয়েন্স প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএসএ’র লসএঞ্জেলেসের ফিল্ম এন্ড থিয়েটার এক্ট্রেস ক্যাটরিনা খ্রামোভা। প্রবন্ধে অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়নে সমসাময়িক সিনেমার ভূমিকা: চলচ্চিত্রগুলির একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ যা আত্মবিশ্বাস, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং স্থিতিস্থাপকতাকে অনুপ্রাণিত করে ইত্যাদি বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন। নাইমা চৌধুরীর পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন ভারতের অভিনেত্রী স্বয়াস্তিকা মুখার্জী, বাংলাদেশের ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার তাহরিমা খান। প্রতিটি সেশনে বিশ্ব পরিবর্তনে নারীর নেতিবাচক ও ইতিবাচক ভূমিকা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে সমাধানের উপায়সমূহ আলোচনায় উঠে আসে।
এর মাধ্যমে দেশি বিদেশি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী নির্মাতাগণ তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ পেলেন। নারী নির্মাতারা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সমূহ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশ্বের নারী নিমাতাদের সামনে তুলে ধরেন।
মন্তব্য করুন