মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে যখন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন হয়। স্বৈরাচারী সরকার, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের যে আস্ফালন চলছিল সেই সময়ে যারা এ দেশের সাহসী সন্তান, বলতে গেলে আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাদের মধ্যে একজন।
শনিবার (৪ মে) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেবঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে জাহানারা ইমাম স্মৃতি স্মারক হস্তান্তর প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটির মাধ্যমে প্রতি জেলায় আন্দোলন হয়েছে। সে সময়ে আমার মফস্বল এলাকায়ও এই নির্মূল কমিটির মাধ্যমে আমরা গণআন্দোলনের মতো জনমত গড়ে তুলেছিলাম। সেই যুদ্ধাপরাধীদের জন্য যে জনমত তৈরি হয়েছিল আমরা সবাই এতে সম্পৃক্ত ছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, সরকার ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে আরেকবার দায়মুক্ত হলাম। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছিলেন ৭ কোটি মানুষের একজন পুরোধা নারী। যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিল, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করেছিল।
সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মা’ হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগের উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন আমাদের শহীদ জননী। তিনি ও তার পরিবারের যেই আত্মত্যাগ, সেই ইতিহাস ও আদর্শ আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। তুলে ধরতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে মহাপরিচালক কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, জাতীয় জাদুঘরের নবম শাখা জাদুঘর হিসেবে জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরকে আমাদের আওতায় নিতে যাচ্ছি। এখানে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ব্যবহৃত আসবাবপত্র, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি প্রদর্শিত ৫ হাজার নিদর্শন রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একাত্তরে জাতিকে উৎসর্গ করেছিলেন তার জ্যেষ্ঠ সন্তানকে। তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ৬টি খণ্ডে ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এই প্রতিবন্ধকতা পার করতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম পেরেছেন। এই অর্জন সকল মানুষের জীবনে ঘটে না। তার জীবনে ঘটার কারণ তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেছেন। যে চেতনা মানব মুক্তির। তিনি রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন। বাংলাদেশের স্বপ্নকল্প তৈরি করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাহানারা ইমামের ছোট ছেলে সাইফ ইমাম জামী।
মন্তব্য করুন