কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আফ্রিকার এক দেশকে চাপে ফেলে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ছক যুক্তরাষ্ট্রের

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ফেরার পুরোনো ছবি। ছবি : সংগৃহীত
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ফেরার পুরোনো ছবি। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে একাধিক আফ্রিকান দেশগুলোর ওপর প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটকে নতুনভাবে সমাধানের নামে গাজাবাসীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানায়, গাজাবাসীদের জন্য মরক্কো, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডকে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর রাজনৈতিক দুর্বলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এরপর মার্চে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, পূর্ব আফ্রিকার ৩টি দেশ- সুদান, সোমালিয়া ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে আলোচনা করেছে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল- গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং ওই দেশগুলোতে তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন।

তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পরিকল্পনা- যেখানে প্রায় ১০ লাখ গাজাবাসীকে লিবিয়ায় পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে তারা। শনিবার (১৭ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ জানায়, এ পরিকল্পনাটি পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

তাদের মধ্যে তিনজন দাবি করেন, এই লক্ষ্যে লিবিয়ার শাসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে ১০ বছর ধরে জব্দ থাকা লিবিয়ার শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক সম্পদ মুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি।

ইসরায়েল এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বলেও দাবি করেছে সূত্রগুলো। যদিও হামাস এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলি সরকারও এনবিসির প্রশ্নের কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

এদিকে এনবিসি জানায়, এই পুনর্বাসন পরিকল্পনা কবে থেকে কার্যকর হবে বা অর্থায়ন কোথা থেকে হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। যদিও পরে একজন মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেন, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই এবং এনবিসির প্রতিবেদন সত্য নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আফ্রিকার দুর্বল ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে চাপে ফেলে এমন একটি মানবিক সংকটের সমাধান খোঁজা বিশ্বনীতি ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। লিবিয়ার মতো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত একটি দেশে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।

ত্রিপোলিভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দেবেইবাহ এবং পূর্বাঞ্চলের সামরিক নেতা খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার ইতোমধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত। রাজধানী ত্রিপোলিতে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন এবং সরকারের ৩ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে লিবিয়া নিজ দেশের জনগণকেই সেবা দিতে ব্যর্থ, সেখানে গাজাবাসীদের পুনর্বাসন কেবল একটি রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক আফ্রিকান দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা আন্তর্জাতিক নীতির গুরুতর লঙ্ঘন। এ ধরনের ছক শুধু ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণই নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিলতর করে তুলবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতক্ষীরায় প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন সম্পন্ন

ফজলুর রহমানকে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

মিয়ানমারে ঐতিহাসিক রেলসেতু ভেঙে দিল বিদ্রোহীরা

রিল বানাতে গিয়ে স্রোতে ভেসে গেলেন ইউটিউবার

আগামী পাঁচ দিন দেশজুড়ে ভারি বর্ষণের শঙ্কা

নেপালকে হারিয়ে জয়ের পথে ফিরল বাংলাদেশের মেয়েরা

ফ্যামিলি মেডিসিনের পথপ্রদর্শক প্রাভা হেলথের ৮ বছর পূর্তি উদযাপন

কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আইনজীবীসহ নিহত ২

কেজিএফ নয়, আয়ের রেকর্ড তৈরি করেছিল অন্য এক সিনেমা

ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না : ধর্ম উপদেষ্টা

১০

এবার নিজ জেলায় ফজলুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

১১

চাকসুর তফসিল ঘোষণার সময় জানাল প্রশাসন

১২

ফজলুর রহমানকে নিয়ে ৯৭ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

১৩

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া বিপ্লব হবে অপূর্ণ : ডা. তাহের

১৪

স্মরণসভায় সাংবাদিকরা / গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করেননি আবদুস শহিদ

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

১৬

নেইমারের জন্য আবার দুঃসংবাদ

১৭

পাচারের সময় সীমান্তে অস্ত্র উদ্ধার

১৮

যেভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে

১৯

‘রিট করার মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনকে বানচালের পাঁয়তারা চালাচ্ছে শিবির’

২০
X