তুরস্ক তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অ-পারমাণবিক বোমা ‘গাজাপ’ প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এনেছে। ইস্তাম্বুলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা শিল্পমেলা ২০২৫-এ এই বোমাটির আনুষ্ঠানিক প্রদর্শন করা হয়। প্রায় ৯৭০ কেজি ওজনের এই বিধ্বংসী বোমাটি তৈরি করেছে তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র।
তুরস্কের এক সরকারি কর্মকর্তা আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, গাজাপ বোমাটি প্রতি মিটার এলাকায় ১০.১৬টি শার্পনেল বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যেখানে প্রচলিত বোমাগুলো সাধারণত তিন মিটার পরপর একটি বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে এর ধ্বংসক্ষমতা অনেক বেশি। এটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, বোমার অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরক ও ফিলার ডিজাইন নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর যোগ্যতা যাচাই ও সার্টিফিকেশন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
‘নেব-২ ঘোস্ট’ : আধুনিক বাঙ্কার বিধ্বংসী অস্ত্র
গাজাপ ছাড়াও মেলায় আরও একটি ভয়ঙ্কর বোমার প্রদর্শন করা হয়- এর নাম ‘নেব-২ ঘোস্ট’। এটিও ৯৭০ কেজি ওজনের এবং একে বর্তমানে বিশ্বের সেরা বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমাগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি সাধারণ মিসাইল সি-৩৫ গ্রেডের কংক্রিটে ২.৪ মিটার পর্যন্ত ঢুকতে পারে। অথচ নেব-২ ঘোস্ট প্রবেশ করতে পারে ৭ মিটার গভীরতায়, তাও সি-৫০ গ্রেডের শক্তিশালী কংক্রিটে- যেটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঠামোর চেয়েও তিনগুণ বেশি শক্তিশালী।
এক পরীক্ষায়, এই বোমাটি একটি দ্বীপে নিক্ষেপ করা হয়। এতে দেখা যায়, বোমাটি মাটির ৯০ মিটার গভীরে প্রবেশ করে এবং সেই সঙ্গে সৃষ্ট হয় ভূমিধস, গ্যাস নির্গমন ও পাথর ধ্বংসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
এই বোমার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এর নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ সময়। যেখানে সাধারণত ২৫ মিলিসেকেন্ডে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখানে নেব-২-তে সময় বাড়িয়ে ২৪০ মিলিসেকেন্ড করা হয়েছে, যাতে বোমাটি আরও গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এই অত্যাধুনিক অস্ত্র দুটি বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কেড়েছে। ‘গাজাপ’ ও ‘নেব-২ ঘোস্ট’-এর মতো অস্ত্র ভবিষ্যতের আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন