কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে লঙ্কার আগুন পৌঁছল নেপালে

নেপালের পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি : সংগৃহীত
নেপালের পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি : সংগৃহীত

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল। লঙ্কায় লাগা আগুন ছড়িয়ে পড়ল পুরো এশিয়ায়। বাংলাদেশ পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়া, তারপর নেপাল। অধিকার আদায়ের দাবি শেষপর্যন্ত রূপ নিচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর বঞ্চনার চিৎকার। এক সময়কার স্থিতিশীল দেশ বলে পরিচিত নেপাল এখন অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার মুখে।

বাংলাদেশে এক বছর আগেই ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পতন ঘটে ফ্যাসিবাদী সরকারের। সেই আন্দোলনের অনুরণনই এখন যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নেপালের রাজপথে। বিক্ষোভের মুখে টালমাটাল প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো নেপালও ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

রাজধানী কাঠমান্ডু ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যেই অন্তত ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বরে ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবন এলাকায়। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন বহু মানুষ। শুধু রাজধানী নয়, সিংহদুর্বার, নারায়ণহিটিসহ সংবেদনশীল প্রশাসনিক এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়, ভাঙচুর চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ওলি জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন। সেনাবাহিনীকে নামানো হয় রাস্তায়। সংসদ ভবনে বিক্ষোভকারীদের আগুন লাগানোর পর সরকার পরিস্থিতি ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করে। তবুও আন্দোলন থামেনি।

এই বিক্ষোভের সূত্রপাত ছিল একেবারেই ভিন্ন কারণে। গেল বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ আন্তর্জাতিক সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে দেশে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিন্তু নির্দেশ মানেনি এসব প্রতিষ্ঠান। এর জেরে চলতি বছরে সরকার আকস্মিকভাবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এক্স নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ নেপালে শুধু ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সক্রিয় ব্যবহারকারীই প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। তাদের অনেকেই ব্যবসা, শিক্ষা কিংবা দৈনন্দিন যোগাযোগে পুরোপুরি নির্ভরশীল এই প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর।

হঠাৎ করে এগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছোট উদ্যোক্তারা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রাস্তায় নামে। তরুণরা স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে প্রতিবাদ শুরু করে। প্রথমে আন্দোলন ছিল কেবল সোশ্যাল মিডিয়া খোলার দাবিতে। কিন্তু দ্রুত সেটি রূপ নেয় দুর্নীতি ও সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে।

সরকার অবশ্য বলছে, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। পুলিশি দমনপীড়ন, গুলি ও কারফিউ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পুলিশ স্বীকার করেছে, শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ঘোষণার জেরে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে আরও মৃত্যুর খবর আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অস্থিরতারই প্রতিচ্ছবি। অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অচলাবস্থা মানুষের ক্ষোভকে প্রতিদিনই বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশের মতো নেপালও একই ধরনের সঙ্কটে জর্জরিত। আর তাই শ্রীলঙ্কায় শুরু হওয়া আগুন এখন পেরিয়ে যাচ্ছে সীমান্তের পর সীমান্ত, তৈরি করছে এক নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা।

প্রশ্ন এখন একটাই—নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি কি এই দাবানল সামাল দিতে পারবেন? নাকি লঙ্কা ও বাংলাদেশের পর হিমালয়ের এই দেশও দেখতে পাবে শাসন পরিবর্তনের তীব্র ঝড়?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ না করে অতিরিক্ত বিল প্রদান, দুদকের অভিযান

ডাকসু নির্বাচনে যাকে ভোট দিতে বললেন সারজিস

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত ১

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগ করতে হবে

যেই জিতুক তাকে অন্যরা বরণ করে নেবেন : আসিফ নজরুল

ক্যালকুলেশান করে আমাকে ভোটবঞ্চিত করলে গাদ্দারি করবেন : মেঘমল্লার

আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারালেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বাইরু

ভারত-নেপাল সীমান্তে উত্তেজনা, সতর্কতা জারি

ডাকসুতে ভিপি পদে দাঁড়ানোর কারণ জানালেন উমামা ফাতেমা

একটি কক্ষ, একটি ইতিহাস

১০

ডাকসু নির্বাচন / আ.লীগের বিভিন্ন গ্রুপে ভিপি পদে শামিমকে জেতানোর নির্দেশনা!

১১

শেষ সময়ে ডাকসু নির্বাচনের ৬ প্রার্থীকে ছাত্রদল থেকে আজীবন বহিষ্কার

১২

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীতে এনসিপির বিক্ষোভ 

১৩

ডাকসু নির্বাচন / নকল আইডি কার্ড তৈরি করে ঢাবিতে প্রবেশের চেষ্টা, আটক ১

১৪

স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্য বিবেচনা করেই ডাকসুতে ভোট দিন : ছাত্রদল সেক্রেটারি

১৫

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে : আমীর খসরু

১৬

ডাকসু নির্বাচন / ব্যালটে ‘ক্রস চিহ্ন’ এঁকে ভোট, ভাঁজ করতে মানা

১৭

বিশ্বকাপে মেসির খেলা নিয়ে যা বললেন স্কালোনি

১৮

যে কেন্দ্রে ভোট দেবেন শিবিরের সাদেক কায়েম ও ফরহাদ

১৯

কবে থেকে বাড়তে পারে বৃষ্টি, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X