মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচিকে মুক্তি দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার ছোট ছেলে কিম অ্যারিস। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিবিসি বার্মাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান। অ্যারিস যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছেন। সেনাবাহনীর হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর গৃহযুদ্ধ শুরু হয় মিয়নমারে। এতে প্রাণ গেছে হাজার হাজার মানুষের। সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরুতে সু চিকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল। পরে গত বছর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে তাকে নির্জন কারাবাস দেওয়া হয়। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে সু চি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যাচ্ছে না। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে গুঞ্জন রয়েছে, কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করছে। ব্রিটিশ নাগরিক কিম অ্যারিস বিবিসিকে বলেন, সেনাবাহিনী সু চি কিংবা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। তারা মিয়ানমারের দূতাবাস, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কেউই তাকে সাহায্য করতে পারেনি। সু চির ছেলে আরও বলেন, ‘এর আগে আমি সংমাদমাধ্যমে কথা বলা কিংবা অনেক বেশি যুক্ত হতে চাইনি।’ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এটাই তার প্রথমবারের মতো দেওয়া সাক্ষাৎকার। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর সু চি যখন কারাগারে ছিলেন, সে সময় মায়ের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি। কিম অ্যারিস বলেন, ‘রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটাই আমার জন্য ভালো ছিল। আমার মা কখনোই চাননি আমি রাজনীতিতে যুক্ত হই। কিন্তু এখন তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য স্পষ্টভাবে সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হচ্ছে না। আমি মনে করি, আমি যা চাই তা বলতে পারি।’ সেনা অভ্যুত্থানের আগে সু চির বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেননি অ্যারিস। বরং তার মায়ের বর্তমান দুর্দশা নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী থাকার পর ২০১০ সালে মুক্তি পান। সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট মিয়ানমারে বন্দী সু চি বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছিলেন। মিয়ানমার ও বিশ্বজুড়ে তার মুক্তি উদযাপন করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে চুপ থেকে তিনি সমালোচিত হন। সেসব নিপীড়িত রোহিঙ্গরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যায় এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর পর কিম অ্যারিস তার মায়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। মাকে দেখে চলে যাওয়ার সময় ইয়াঙ্গুনের বাজার থেকে কেনা একটি কুকুর উপহার দেন তিনি।
মন্তব্য করুন