ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এক অদ্ভুত দ্বিমুখী পথে হাঁটছে রাশিয়া- একদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনার বার্তা দিচ্ছেন, অন্যদিকে ইউক্রেনের ওপর ‘মরণ কামড়’ হানার জন্য তৈরি করছে সর্বাত্মক সামরিক ঘাঁটি।
বন্দি বিনিময়, রোডম্যাপের ঘোষণা, কূটনৈতিক তৎপরতা- সবই চলছে সমান্তরালে। অথচ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়া সামনের গ্রীষ্মে ভয়াবহ হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনের।
শুক্রবার (৬ জুন) ইয়াহু নিউজ তাদের প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছিল, রাশিয়া তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং নতুন ফ্রন্ট খুলে সীমান্তে হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। ইউক্রেন দাবি করছে, রাশিয়ার বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতির স্পষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাসে রুশ বাহিনী গড়ে প্রতিদিন ৫.৫ বর্গমাইল ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখল করেছে- যা এপ্রিলের তুলনায় দ্বিগুণ। এখন রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য ডনবাস অঞ্চল। এর মধ্যে লুহানস্কের ৯৯ শতাংশ ও ডোনেৎস্কের ৭৭ শতাংশ অংশ ইতোমধ্যেই রুশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষভাবে টার্গেটে রয়েছে কোস্তিয়ানতিনিভকা শহর- একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল জংশন। এটি দখলে গেলে ইউক্রেনের রসদ সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। একইসঙ্গে কৌশলগত শহর ক্রামাতরস্ক রুশ রকেটের সরাসরি পাল্লায় চলে আসবে।
এই যুদ্ধে বড় ট্যাঙ্কের সজ্জা এখন অতীত। রুশ বাহিনী এখন ছোট ছোট ইউনিটে হামলা চালাচ্ছে, তিন থেকে পাঁচজনের দল খচ্চর ব্যবহার করে রসদ বহন করছে।
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো রাশিয়ার ড্রোন উৎপাদনের সক্ষমতা। ইরানের শাহেদ ড্রোন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা নিজস্ব গেরান-২ ড্রোন তৈরি করেছে, যার দৈনিক উৎপাদন ১০০টি ছাড়িয়ে গেছে। ফাইবার-অপটিক ‘এফপিভি ড্রোন’, যা ২৫ মাইল তারে সংযুক্ত হয়ে রেডিও সিগনাল ছাড়াই পরিচালিত হয়, তা ইউক্রেনীয় সেনাদের কাছে ‘অদৃশ্য ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও যুদ্ধের ভার বহন করছে রাশিয়া। নতুন সৈন্য নিয়োগে বড় অঙ্কের বোনাস ও বেতন অফার করায় সেনাবাহিনীর আকার এখন ৬ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও ২০২৪ সালেই দেশটি ৪ লাখের বেশি সৈন্য হারিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া সাময়িকভাবে এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পাল্টা চাপে পড়বে তারাই। কারণ যুদ্ধের কারণে দেশটির অর্থনীতি ইতোমধ্যে নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, সুদের হার ২১ শতাংশ, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে এবং জাতীয় অর্থ তহবিল নিঃশেষের পথে। বিশ্বব্যাংকের মতে, এই অর্থনৈতিক মডেল টেকসই নয়।
সবমিলিয়ে, এই যুদ্ধ আর শুধু কামান-বন্দুকের নয়; এটি প্রযুক্তি, মনোবল ও অর্থনৈতিক শক্তির এক জটিল লড়াই। সামনের গ্রীষ্মেই হয়তো নির্ধারিত হবে- কার ঘাড়ে চাপে যুদ্ধের আসল বোঝা।
মন্তব্য করুন