কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান। এ উত্তেজনা এখন যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। এতে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন ভারতীয়রা।
বুধবার (০৭ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তের একেবারে ধারঘেঁষে অবস্থিত সালামাবাদ গ্রামমে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সকালে সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ফলে গ্রামটির প্রায় পুরোটাই খালি হয়ে গেছে। বিবিসির প্রতিনিধি দল সালামাবাদ পৌঁছে দেখতে পান—এই গ্রাম এখন যেন এক ভুতুড়ে জনপদ।
বিবিসি জানিয়েছে, সকালবেলায় ছোঁড়া আর্টিলারি শেল বিস্ফোরণে একাধিক বাসিন্দা আহত হন। তাদের বারামুলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পর গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া ও ছাই। বহু বাড়ি এখনো জ্বলছে, কিন্তু তাদের কেউ আর পাশে নেই।
গ্রামের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী বশির আহমদ বলেন, গ্রামের ৮৫ শতাংশ মানুষ পালিয়ে গেছে। সরকার কিছু জানায়নি, জানলে আগেই চলে যেতাম। ওরা জানত গোলাবর্ষণ হতে পারে, তবুও আমাদের ফেলে রেখেছে।
সালামাবাদ বহু বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের শিকার। তবে ২০২১ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। গ্রামে আবার শুরু হয়েছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কিন্তু আজকের গোলাবর্ষণের পর সেই স্বস্তি যেন এক মুহূর্তে উড়ে গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানের ৬টি এলাকায় ২৪টি বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরিদকে, শিয়ালকোট, শকরগড় এবং পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের কোটলি ও মুজাফফরাবাদে হয়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর পূর্বাঞ্চলে ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই-তিন বছর বয়সী একটি শিশু মেয়ে, সাতজন নারী ও চারজন পুরুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ নারী ও ২৮ পুরুষ।
মুজাফফরাবাদের কাছে বিলাল মসজিদে চালানো হামলায় তিনজন নিহত হন, আহত হন এক মেয়ে ও এক ছেলে। কোটলির আব্বাস মসজিদে হামলায় নিহত হন ১৬ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ১৮ বছর বয়সী এক ছেলে, আহত হন এক মা ও তার মেয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের হামলার পর পাঞ্জাব প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল ও অন্যান্য জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ।
এদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি যুদ্ধ ড্রোন ভূপাতিত হয়েছে। আইএসপিআরের ডিজি বলেন, শত্রুর আগ্রাসনের জবাবে প্রতিরক্ষামূলকভাবে আমরা ৩টি রাফায়েল জেট, একটি মিগ-২৯, একটি এসইউ বিমান এবং একটি হেরন যুদ্ধ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছি।
তিনি জানান, জম্মু, আখনুর ও শ্রীনগরের সাধারণ এলাকাগুলোতে একটি করে বিমান এবং অবন্তীপুরে দুটি বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সীমান্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ১০ ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। পরমাণু শক্তিধর দু-দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
মন্তব্য করুন