কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জুমার দিনে মসজিদে আগুন দিল ইসরায়েলিরা

ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ পরিদর্শন করছেন স্থানীয় এক ফিলিস্তিনি। ছবি : সংগৃহীত
ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ পরিদর্শন করছেন স্থানীয় এক ফিলিস্তিনি। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীরা একটি মসজিদে আগুন লাগিয়ে ভবনের দেওয়ালে বিদ্বেষমূলক স্লোগান লিখে গেছে। শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) জুমার দিন সকালে সালফিতের মারদা গ্রামে বার আল-ওয়ালিদাইন মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। খবর আল-জাজিরা

স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, হামলাকারীরা মসজিদের প্রবেশপথে আগুন লাগানোর পাশাপাশি ভবনের দেওয়ালে হিব্রু ভাষায় ‘প্রতিশোধ’ এবং ‘আরবরা নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে যায়।

গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মসজিদে আগুন লাগানোর পর এটি পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ার আগেই স্থানীয়রা তা নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার পর মসজিদের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে ভবনের বাইরের দেয়ালে লেখা স্লোগানগুলোর ক্ষতি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।

মারদা গ্রাম কাউন্সিলের প্রধান নাসফাত আল-খুফাশ এই হামলাকে ‘সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের হামলা ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকারকে স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে।’

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘স্পষ্ট বর্ণবাদী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে বলা হয়, ‘এ হামলা ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি সরকার এবং তাদের প্রশাসনিক নীতির প্রতিফলন, যা জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ ও বৈষম্য সৃষ্টি করছে।’

এর আগেও ইসরায়েলি বসতকারীরা পশ্চিম তীরে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস করার পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় স্থানগুলোতে আক্রমণ করেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়। তবে ইসরায়েলি সরকার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গড়িমসি করে আসছে, যার ফলে বসতকারীদের হামলার ঘটনা প্রায়ই বেড়ে চলছে।

গভর্নর আবদুল্লাহ কামিল জানিয়েছেন, বসতকারীরা পূর্বেও বিভিন্ন সময় গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়েছে এবং গ্রামবাসীদের ধর্মীয় স্থানগুলোর পাশাপাশি তাদের বাড়িঘরও ভেঙে দিয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশ এবং শিন বেট (ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা) এক যৌথ বিবৃতিতে এ হামলাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছেন, ‘আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে বসতকারীদের হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৪০০টি বসতকারীদের হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই হামলায় শুধু পশ্চিম তীরেই ৮০৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এই হামলা এবং সহিংসতা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ। ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপন সত্ত্বেও সহিংসতা থামছে না, যা পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ।

এটি দেখাচ্ছে, দখলকৃত এলাকায় বসতকারীরা ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় আঘাত করছে, আর ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। এ ধরনের হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর সংকেত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারো দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮% মার্কিনি : রয়েটার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাল ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১০

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১১

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১২

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৩

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৪

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৫

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৬

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৭

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

১৮

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

১৯

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

২০
X