ইসরায়েল বহু বছর ধরে তাদের সুরক্ষার জন্য আয়রন ডোম ডিফেন্স সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির জনগণের কাছে এটি গর্বেরও প্রতীক। প্রথম দিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনকামী গোষ্ঠী হামাসের ছোড়া রকেটগুলো আটকানোর জন্য আরয়ন ডোম তৈরি করেছিল ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম ২০১১ সালে এটি তৈরি করে দিয়েছিল। রাডার নির্দেশিত এ ব্যবস্থাটি স্বল্প পাল্লার রকেট, মর্টার ও ড্রোনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের তিনটি ভাগ আছে। একটি ভাগের নাম ডেভিডস স্লিং বা ম্যাজিক ওয়ান্ড, তা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ক্রুজ মিসাইলের মোকাবিলা করতে পারে। অ্যারো সিস্টেম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
আয়রন ডোম স্বল্প পাল্লার রকেট ও গোলার মোকাবিলা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়রন ডোম সিস্টেমকে বলা হয় ইসরায়েলের জীবন বিমা ব্যবস্থা।
কীভাবে আয়রন ডোম কাজ করে
আয়রন ডোম ব্যাটারির মধ্যে একটা রাডার ইউনিট থাকে এবং একটি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকে, যা ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, রকেট চিহ্নিত করতে পারে, তার গতিপথ এবং কোন লক্ষ্যে আঘাত করতে চলেছে, তা ধরতে পারে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার মোকাবিলা করে।
এর ব্যাটারির মধ্যে তিন থেকে চারটি রকেট লঞ্চার আছে। তাতে ২০টি মিসাইল থাকে। চিহ্নিত করা ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, ড্রোনের দিকে তা ধেয়ে যায়। তাতে আঘাত করে। আক্রমণকারী ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশেই বিস্ফোরিত হয়। তবে সেগুলোর ভেঙে পড়া টুকরো থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইসরায়েলে এখন ১০টি মোবাইল আয়রন ডোন সিস্টেম কাজ করছে। এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের নির্মাতা রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম জানিয়েছে, একটা ব্যাটারি একটি মাঝারি মাপের শহরকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে ছোড়া রকেটকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের হিসাবমতে, ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ১৩টি সিস্টেম দরকার।
এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর
রাফালের দাবি, আয়রন ডোমের সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত তা পাঁচ হাজার রকেট নিষ্ক্রিয় করেছে বলে ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা ভূখণ্ড থেকে হামাস তিন হাজার রকেট ছুড়েছিল। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইসরায়েলসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
এই সিস্টেমের দাম কত
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের মতে, একটা আয়রন ডোম ইন্টারসেপ্টার মিসাইল রেঞ্জের দাম ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৫ লাখ থেকে ৪৩ লাখ টাকার মতো, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৮ লাখ থেকে প্রায় ৬১ লাখ টাকার মতো)।
এই খরচের কথা চিন্তা করেই ইসরায়েল মিসাইল, ড্রোন ও কামানের গোলা নিষ্ক্রিয় করার জন্য আয়রন বিম নামে নতুন একটি সিস্টেম নিতে চায়।
এই ব্যবস্থায় লেসার বিম দিয়ে ছোট ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কামানের গোলা নিষ্ক্রিয় করা যায়। বিশেষ করে ড্রোন মোকাবিলায় তা খুবই কার্যকর।
তারা ২০২৫ সালের অক্টোবরে আয়রন বিম চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু মে মাসেই ইসরায়েলের সেনা জানায়, তারা আয়রন বিম সিস্টেম মোতায়েন করেছে।
আয়রন বিম কী
২০১৪ সালে রাফাল প্রথম এই সিস্টেম তৈরি করে। এই সিস্টেমের সুবিধা হলো, এই সিস্টেমের খরচ কম। কম খরচে তারা কার্যকরভাবে আক্রমণের মোকাবিলা করতে পারে।
এই সিস্টেমের খরচ কত তা নিয়ে নানান হিসাব আছে। লেসার ব্যবস্থার মাধ্যমে আক্রমণ প্রতিহত করতে সবমিলিয়ে কয়েক ডলার থেকে দুই হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং ভারতীয় মুদ্রায় এক লাখ ৭২ হাজার টাকা) খরচ হয়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
মন্তব্য করুন