ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করার জন্য বদ্ধপরিকর ইসরায়েল। তারা মনে করে, ইরান পরমাণু বোমার অধিকারী হলে তা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। আর এজন্য ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আঘাত হানতে এবং সরাসরি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েল যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এককভাবে সফল হতে পারবে না, তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলোন পিঙ্কাস।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল একা ইরানের পারমাণবিক-সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের বাংকার ধ্বংসকারী বোমা, ভারী বোমারু বিমান এবং উন্নত ডেলিভারি সিস্টেম, যেগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে।’
বিশেষত, ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত ‘ফোর্ডো’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে ধ্বংস করা ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটি পাহাড়ের নিচে এবং অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সাধারণ বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এই কেন্দ্রের কোনো ক্ষতি হবে না। তাই ইসরায়েল যতই সফলতা দাবি করুক এই কেন্দ্র ধ্বংস করা যে ততটা সহজ নয়।
পিঙ্কাস বলেন, ‘এ কারণেই নেতানিয়াহু বারবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সংঘাতে সরাসরি যুক্ত করার চেষ্টা করছেন। কারণ ইসরায়েল জানে, শুধু এখনকার হামলায় কিছুটা প্রতীকী লাভ হলেও, পরমাণু হুমকি দূর হবে না। এই জটিল ও গভীর স্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, ইরানের মোট ১৩টির বেশি পারমানবিক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা স্থাপনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং পারমাণু কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় হেভি ওয়াটার উৎপাদন কেন্দ্র। এছাড়াও একাধিক ইউরেনিয়াম খনি রয়েছে ইরানের।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।
মোট মজুত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণু অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় তাদের নেই। তবে চলতি সপ্তাহে ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সরাসরি হামলা ও চলমান পরিস্থিতি ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকেই নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
মন্তব্য করুন