বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩১ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আয়াতুল্লাহ খামেনি যেভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে উঠলেন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি : সংগৃহীত
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় ইরানের শাসনব্যবস্থা অনেকটাই ভিন্ন। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্যরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও প্রকৃত ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। ১৯৮৯ সাল থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় তাকে হত্যার চেষ্টা হতে পারে এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন, তিনি জানেন খামেনি কোথায় আছেন, তবে এখনই তাকে হত্যা করা হবে না। প্রশ্ন উঠেছে, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়, বরং খামেনি কেন আমেরিকা ও ইসরায়েলের প্রধান টার্গেট?

সর্বোচ্চ নেতার পদের সূচনা

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং একটি ধর্মীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপ্লবের মাধ্যমে রেজা শাহ পাহলভির শাসনের অবসান হয় এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থা চালু হয়। এরপর থেকে দেশটি পেয়েছে দুজন সর্বোচ্চ নেতা- আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ও আলী খামেনি। এই পদে সাধারণত শিয়া ধর্মের জ্যেষ্ঠ ধর্মগুরুরা থাকেন।

আলী খামেনির রাজনৈতিক উত্থান

১৯৩৯ সালে মাশহাদ শহরে জন্ম নেন আলী খামেনি। ধর্মীয় শিক্ষা লাভের পর কোম শহরে পড়াশোনা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি আয়াতুল্লাহ খোমেনির আন্দোলনে যোগ দেন এবং শাহবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে একাধিকবার গ্রেপ্তার হন।

১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর তিনি বিপ্লবী পরিষদের সদস্য হন এবং পরবর্তীতে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর গঠনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮১ সালে একটি মসজিদে বোমা হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার ডান হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। ওই বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ-আলী রাজাই নিহত হলে খামেনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী আট বছর এ দায়িত্বে থাকেন।

সর্বোচ্চ নেতার আসনে অধিষ্ঠিত

১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞ পরিষদ আলী খামেনিকে সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত করে। যদিও তিনি তখন ‘গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ’ ছিলেন না, সংবিধান সংশোধন করে তাকে উপযুক্ত ঘোষণা করা হয়। রাতারাতি তাকে হোজ্জাতুল ইসলাম থেকে আয়াতুল্লাহ পদে উন্নীত করা হয়।

তখনই সংবিধানে আরও একটি বড় পরিবর্তন আসে- প্রধানমন্ত্রী পদের বিলুপ্তি এবং রাষ্ট্রপতির হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান। তবে বাস্তবে দেশটির সব বড় সিদ্ধান্তের শেষ কথাটি বলেন সর্বোচ্চ নেতা।

প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে সম্পর্ক

খামেনির শাসনকালে ছয়জন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন, যাদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ খাতামি, মাহমুদ আহমাদিনেজাদ, হাসান রুহানি, ইব্রাহিম রাইসি ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। খাতামি সংস্কারপন্থি হওয়ায় তার অনেক উদ্যোগে খামেনি বাধা দিয়েছেন। আহমাদিনেজাদের সঙ্গে ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি।

সংকট ও চ্যালেঞ্জ

২০০৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং গণবিক্ষোভ দমন ছিল তার শাসনামলের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এরপর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেইমানি নিহত হন। সোলেইমানি ছিলেন খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু। প্রতিশোধ হিসেবে ইরান দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে IRGC ভুলবশত একটি ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করে, যাতে ১৭৬ জন নিহত হন। এরপর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে করোনা মহামারির সূচনা হলেও প্রথমে খামেনি একে গুরুত্ব দেননি।

আন্তর্জাতিক অবস্থান

খামেনি বহুবার ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি ইসরায়েলকে ‘একটি ক্যানসার আক্রান্ত টিউমার’ বলেন এবং হলোকাস্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি তার সম্মতিতেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে ‘অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস’ নামের একটি ৮৮ সদস্যবিশিষ্ট ধর্মীয় পরিষদ। এদের নির্বাচন হয় আট বছর অন্তর। তবে সদস্যদের প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিতে হয় গার্ডিয়ান কাউন্সিলকে, যার সদস্যদের নির্বাচন করেন খামেনি। ফলে এই দুই পরিষদের ওপরই তার প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত।

একবার নির্বাচিত হলে সর্বোচ্চ নেতা আজীবন এই পদে বহাল থাকতে পারেন।

উত্তরসূরি নিয়ে প্রশ্ন

৮৬ বছর বয়সী খামেনি বেশ কিছু বছর ধরে স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছেন। তার মৃত্যুর পর কে হবেন উত্তরসূরি, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। ইব্রাহিম রাইসিকেই পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের ১৯ মে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এর ফলে উত্তরসূরি নির্ধারণ আরও জটিল হয়ে পড়ে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘাতে খামেনির জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য তিনজন উত্তরসূরির নাম আলোচনায় এসেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনামলে ইরান বহু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো- তার অনুপস্থিতিতে দেশটির নেতৃত্ব কার হাতে উঠবে এবং ইরান কোন পথে হাঁটবে?

সূত্র : বিবিসি বাংলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকসুর ফল কারচুপির অভিযোগে শাহবাগে ছাত্রদলের অবস্থান

৩১ দফা বাস্তবায়নে / বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সোহাগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

চবিতে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে ভলকার তুর্কের আহ্বান

বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাল জামায়াত

চাকসু নির্বাচনে আরেক হলের ফল ঘোষণা, ভিপি পদে এগিয়ে ছাত্রদল

গোমতীর চরে আগাম সবজির চাষ, অধিক লাভের আশা কৃষকের

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে কেশবপুরের তপস্যা

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

ইন্দোনেশিয়ায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১০

১০

রাত থেকে লাইনে নারী-পুরুষ, সকালে মেলে আটা

১১

ওসিকে অপসারণে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

১২

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৩

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব কাউনিয়া আদি শ্মশানে

১৪

বিশ্ব মেরুদণ্ড দিবস ২০২৫ : মেরুদণ্ডের যত্নে সচেতন হই, সুস্থ জীবন গড়ি

১৫

কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের বেইলি ব্রিজে ফাটল, দুর্ঘটনার শঙ্কা

১৬

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দলের একক মাতবরি থাকবে না : নুর

১৭

জুলাই জাতীয় সনদে সই করবে না ৪ দল

১৮

সিলেটে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভাগ্য নির্ধারণ রোববার

১৯

ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

২০
X