ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিতরণ করা ত্রাণসামগ্রী থেকে মাদক বড়ি উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের বরাতে জানা গেছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সরবরাহকৃত আটার ব্যাগের ভেতর থেকে ‘অক্সিকোডোন’ নামের একটি শক্তিশালী ও আসক্তিকর ব্যথানাশক বড়ি পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কার্যালয় জানায়, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চার ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য পেয়েছি, যারা বিতরণ করা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়ি পেয়েছেন।’ এতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, কিছু ক্ষেত্রে মাদক গুঁড়ো করে কিংবা দ্রবীভূত করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অক্সিকোডোন মূলত ক্যানসার রোগীদের তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বিভ্রম ও মৃত্যুঝুঁকি।
এ সংক্রান্ত কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে আটার ব্যাগের সঙ্গে মাদকের বড়ি দেখা যায়। এরপরই গাজা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে।
স্থানীয় এক ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ একে ‘গণহত্যার নিকৃষ্টতম রূপ’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই মাদক আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংসের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকেই পুরোপুরি দায়ী করছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় অবরোধের সুযোগ নিয়ে সাহায্য ও সহায়তার নামে মাদক পাচারের কৌশল নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে তারা ‘মৃত্যুকূপ’ বলেও আখ্যা দিয়েছে।
ত্রাণ সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্ক
এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থা, যা বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
তবে আন্তর্জাতিক বহু মানবাধিকার সংস্থা জিএইচএফের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার অভাব ও জবাবদিহি না থাকার অভিযোগ তুলেছে। গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইন সহায়তা সংস্থা একযোগে জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানবিক তৎপরতায় বাধা সৃষ্টি করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগিতা করছে।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিগত এক মাসে জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ শুক্রবার জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একাধিক সদস্য স্বীকার করেছেন, তারা জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রে অবস্থানরত নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মিডল ইস্ট আই জিএইচএফের কাছে এই অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে। সংস্থাটি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই
মন্তব্য করুন