

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইরাক ধ্বংসের অন্যতম হোতা ডিক চেনি মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে স্থানীয় সময় নিউমোনিয়া ও হৃদরোগজনিত জটিলতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর এপির।
২০০৩ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের লক্ষ্যে চালানো যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো আগ্রাসনের অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী বা ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন চেনি। তার নেতৃত্ব ও পরামর্শেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে বড় পরিবর্তন আসে।
ডিক চেনির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় যুদ্ধেই। ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই যুদ্ধের সামরিক পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক জোট সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিল তার ওপর।
এক দশক পর, ২০০০ সালে বুশ সিনিয়রের ছেলে জর্জ ওয়াকার বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ডিক চেনি হন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দু’দফা এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জর্জ বুশ জুনিয়রের সরকারে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন চেনি। অনেকে মনে করতেন, প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার পরামর্শেই নেওয়া হতো।
২০০৩ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে ‘বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে’ এই অভিযোগ তুলে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। চেনিই ছিলেন সেই অভিযানের মূল নীতিনির্ধারক। তবে পরে প্রমাণিত হয়, ইরাকে এমন কোনো অস্ত্রের অস্তিত্বই ছিল না। সে যুদ্ধেই সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে এবং ২০০৬ সালে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ইরাকে ‘গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার’ স্বপ্ন দেখেছিলেন চেনি; কিন্তু বাস্তবে মার্কিন আগ্রাসনের পর দেশটিতে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যায়। সেই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আলকায়দা ও পরে আইএসের মতো উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী। যুদ্ধ-পরবর্তী দুই দশকেও ইরাকে স্থিতি ফেরেনি।
চেনির মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ডিক ছিলেন ভদ্র, সম্মানিত ও নিবেদিতপ্রাণ জনসেবক। তিনি আমাদের সময়ের অন্যতম বুদ্ধিমান এবং দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন।
মন্তব্য করুন