

দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোপন অভিযানের জাল বুনে আসছিল। নীরবে কাজ চলছিল- দেশটির অভ্যন্তরে ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন, গোপনে অস্ত্র ব্যবস্থাসহ কমান্ডো পাচার। এক কথায় এক বিশাল পরিকল্পনা নিয়েই ওঁৎ পেতে বসেছিল ইসরায়েল।
কিন্তু জুন মাসে ইরানের উপর করা সেই অতর্কিত হামলার একেবারে কড়া জবাব দিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনির দেশ প্রমাণ করে দিল, তারাও আগে থেকে পাল্টা আঘাত হানতে প্রস্তুত ছিল।
লোহার দুর্গ বলে পরিচিত আয়রন ডোমকে বোকা বানিয়ে ইসরায়েলি সদর দপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ইরান। ইসরায়েল নিজের তৈরি ফাঁদে শিকার ধরতে গিয়ে উল্টো ইরানের পটকা ফাঁদে ধরা পড়েছিল।
এই কৌশলকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ডিকয় ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল প্রতারণা। এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেই সময় মুহূর্তের মধ্যে দুর্বল হয়ে যায়। ফলে নেতানিয়াহুর সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়, যা খোদ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রকাশ করেছিল।
এটি আসল ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেখতে এবং একইরকম আচরণ করে। কিন্তু এটি মূলত শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়, এটি আসলে একটি ভুয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ফাঁদ।
কৌশলটি ছিল এমন, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার সময় আসলটির সঙ্গে ধাতব পটকা নিক্ষেপ করা হয়, যা থেকে তীব্র আগুন বের হতে থাকে। ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলো এই ধাতব পটকা শনাক্ত করে সেটিকে আসল ক্ষেপণাস্ত্র মনে করে।
আসল ক্ষেপণাস্ত্র মনে করায়, সেটিকে বিধ্বস্ত করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষিপ্ত হয়। এভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র যখন ধাতব পটকার দিকে যেতে থাকে বা সেটিকে বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন আয়রন ডোমের অস্ত্রাগার খালি হতে শুরু করে। এই সুযোগে দ্রুতগতিতে আসল ক্ষেপণাস্ত্রটি তার লক্ষ্যে আঘাত করে।
মজার ব্যাপার হলো ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে একবার প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র বের হয়ে গেলে, সেটি নতুন করে লোড করতে প্রায় ১০ থেকে ১১ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমে শনাক্ত হওয়ার মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই ইসরায়েলের ভূমিতে আঘাত হানতে পারে, আর এখানেই ধরা খায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলকে ধরাশায়ী করতে পারলেও ইরান এখন আরও বেশি সতর্ক এবং নিজেদের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে অবিচল। দেশটি সম্প্রতি সব নিয়ম-নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘোষণা দিয়েছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং এর পাল্লা কোনোভাবেই সীমিত করা হবে না।
মন্তব্য করুন