ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলি শত্রুর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করব।’ খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে ‘শাসন পরিবর্তন’ ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, যদি বর্তমান ইরানি সরকার দেশের উন্নয়ন করতে না পারে, তাহলে শাসন পরিবর্তন কেন হবে না?
গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দফায় দফায় হামলা চলছে। এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা চালায়।
হামলার বিষয়ে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্বেই সমন্বয় ছিল। ইসরায়েলি বিমান ও মিসাইল ইউনিটও ইরানে পৃথকভাবে হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বাংকার লক্ষ্য করে বাংকার বাস্টার বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।
ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না বলে জানিয়েছে দেশটির পরমাণু সংস্থা। ফোরদো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, হামলার পর ওইসব স্থাপনা থেকে আশপাশে বিকিরণের মাত্রা বাড়েনি বলে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে চীন ও রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছে ও জাতিসংঘে স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, সৌদি আরব—সবাই বরাবরের মতো কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে আছে । মেক্সিকো, চিলি, কিউবা ও ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরোধিতা করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, এটি ভয়াবহ ও বিপজ্জনক একটি উত্তেজনা। সামরিক সমাধান নেই, কেবল কূটনৈতিক পথই উত্তরণের উপায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালিতে উত্তেজনা বাড়ায় বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহে বড় প্রভাব পড়তে পারে। এরইমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম ৫ মাসের উচ্চতায় পৌঁছেছে, ব্রেন্টে সর্বোচ্চ প্রতি ব্যারেল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৯ ডলার। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ মুদ্রা ও সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন, ডলারের মান বেড়েছে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেসে নিরাপত্তা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ।
ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের ৪০০ জনের বেশি নিহত এবং ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটি।
মন্তব্য করুন