

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এসটিসি) দখলকৃত দুটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ থেকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। চলতি মাসে তেলসমৃদ্ধ হাজরামাউত ও আল মাহরা গভর্নরেট দখলের পর এই আহ্বান জানানো হয়। এর ফলে হুতি বিদ্রোহীদের বিরোধী শাসক জোটের ভেতরে বিভাজন আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসটিসির সামরিক তৎপরতাকে ‘অযৌক্তিক উত্তেজনা’ হিসেবে আখ্যা দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইয়েমেনের সব পক্ষ ও রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহযোগিতা, সংযম এবং এমন কোনো পদক্ষেপ এড়ানো জরুরি, যা দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সৌদি আরব জানিয়েছে, মধ্যস্থতামূলক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে, যার লক্ষ্য হলো এসটিসি বাহিনীকে ওই দুই গভর্নরেটের বাইরে তাদের পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেসব এলাকার সামরিক ক্যাম্প জাতীয় শিল্ড বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। রিয়াদ আশা প্রকাশ করেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে পিছু হটবে, যাতে স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।
চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সমর্থিত এসটিসি খুব কম প্রতিরোধের মুখে হাজরামাউত ও আল-মাহরায় গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনা, সরকারি ভবন এবং সীমান্ত ক্রসিং দখল করে নেয়। একই সঙ্গে তারা ইয়েমেনের অস্থায়ী রাজধানী আদেনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদও নিয়ন্ত্রণে নেয়।
২০১৫ সাল থেকে চলমান ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরব ও ইউএই উভয়ই ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এসটিসি সৌদি-সমর্থিত প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের অংশ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
গত ১২ ডিসেম্বর সৌদি আরব ও ইউএই যৌথভাবে আদেনে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সংকট নিরসনের চেষ্টা করলেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সৌদি আরবের সঙ্গে হাজরামাউতের ৬৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা রিয়াদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ওমান আল-মাহরাকে তার সীমান্ত নিরাপত্তার দিক থেকে স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে। এই দুই গভর্নরেট গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ ও জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ, যা এসটিসি একটি স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন রাষ্ট্র গঠনের জন্য অপরিহার্য মনে করে।
২০১৭ সালে গঠিত এসটিসির লক্ষ্য হলো ১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। গোষ্ঠীর নেতা আইদারুস আল-জুবাইদি প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের সদস্য হলেও সম্প্রতি তিনি সরকারের বাইরে গিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মসূচি জোরদার করছেন।
মন্তব্য করুন