কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৮ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কেন ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে জর্ডান?

জর্ডানের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত
জর্ডানের পতাকা। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দেশ দুটি। যেটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।

তবে শক্তিশালী এই দেশ দুটির চলমান যুদ্ধের পাশাপাশি আলোচনা চলছে আরও একটি বিষয় নিয়ে, কে কোন দেশের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের অবস্থান জানালেও সবার নজর কেড়েছে জর্ডান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব এই দেশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই।

ইরানের ড্রোন ও মিসাইল থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেনের পাশাপাশি বেশ কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে জর্ডান।

যদিও এক বিবৃতিতে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা নিজের দেশকে রক্ষা করার অংশ হিসেবে ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করেছে, ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য নয়।

জর্ডানের এমন বিবৃতি ঘিরে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলছেন- হামাস, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে সংঘাত চলছে সেখানে ‘ক্রসফায়ারে’ পড়তে চায় না জর্ডান।

এ কথা ঠিক যে, জর্ডানের রাজতন্ত্রের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। গত ২৫ বছর যাবত জর্ডানের বাদশাহ রয়েছেন দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। পর্দার আড়ালে জর্ডানের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কও একেবারে খারাপ নয়।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক এমিলি হোকায়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, জর্ডান প্রমাণ করতে চেয়েছে যে তারা আমেরিকা এবং ইসরায়েলের ভালো সহযোগী। কিন্তু এ বিষয়টি নেতানিয়াহুর কাছ থেকে আশা করবেন না। গাজায় হামলা বন্ধ এবং পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে উসকানি বন্ধ করার জন্য আম্মানের আহবানের সাড়া দেবে না।

তবে ভিন্ন যুক্তিও আছে। ভৌগোলিকভাবে জর্ডানের অবস্থান এমন একটি অবস্থায় রয়েছে যে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে কোনো যুদ্ধ শুরু হলে সেটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে জর্ডানের ওপর।

জর্ডান ইসরায়েল স্বার্থ

১৯৯৪ সালে জর্ডান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৯ সালে মিশর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবার পর জর্ডান ছিল স্বীকৃতি দানকারী দ্বিতীয় মুসলিম দেশ।

ইসরায়েলের সংবাদপত্র 'টাইমস অব ইসরায়েল' এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যে পানি চুক্তি নবায়ন করার জন্য জর্ডান ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানায়। কিন্তু এর বিপরীতে ইসরায়েল জর্ডানকে পাল্টা শর্ত দিয়েছে।

এই শর্ত হচ্ছে – গাজা ইস্যুতে জর্ডান যাতে খুব বেশি শক্ত অবস্থান না নিয়ে তাদের অবস্থান নরম করে।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আরেকটি চুক্তির আওতায় জর্ডান ইসরায়েলের কাছে সৌরবিদ্যুৎ রপ্তানি করছে।

পর্যবেক্ষকের অনেকেই বলছেন, জর্ডান প্রকৃতপক্ষে একটি 'চিকন সুতোর' ওপর দিয়ে হাঁটছে। একদিকে আমেরিকা এবং ইসরায়েলের সাথে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। কারণ, আর্থিকভাবে দুর্বল দেশ জর্ডান নানা ধরনের সহায়তার জন্য আমেরিকা এবং ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করতে হয়।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা। কারণ, জর্ডানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ফিলিস্তিনি শরণার্থী।

ইতিহাস কী বলে?

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মোট চারটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে জর্ডান। ১৯৯৪ সালে জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইউএন রিলিফ এন্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রেফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট’- এর হিসেবে মতে প্রায় ২২ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডানে নিবন্ধিত আছে। কিন্তু নিবন্ধনের বাইরেও আরও অনেক ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডানে অবস্থান করছে। সবমিলিয়ে এই সংখ্যা ৩০ লাখ কিংবা তার চেয়ে বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

১৯৫১ সালে জর্ডানের তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একজন ফিলিস্তিনি আরব এই হত্যাকারী ছিলেন।

বাদশাহ আবদুল্লাহকে ফিলিস্তিনিদের অনেকেই পছন্দ করতেন না। এর একটি বড় কারণ ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে ফিলিস্তিন নিয়ে তার ভূমিকা।

শুধু তাই নয়, ১৯৭১ সালে জর্ডানের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করেছিল ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা।

যদিও প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে কয়েকটি প্রতিবেশী আরব দেশের দেশের সাথে মিলে জর্ডানও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জর্ডান যুদ্ধে অংশ নিলেও ভেতরে ভেতরে বাদশাহ আবদুল্লাহ ইসরায়েলের সাথে আঁতাত করেছেন।

প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ১৯৫০ সালে জর্ডান তাদের সীমান্তের সাথে ফিলিস্তিনি কিছু ভূখণ্ডকে জর্ডানের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। বাদশাহ আবদুল্লাহ’র এই পদক্ষেপ পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন দিলেও ফিলিস্তিনিরা সেটি মানতে পারেনি।

বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যা করার পর মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র গোপন প্রতিবেদনে তাকে ব্রিটেনপন্থি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তখন সিআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাদশাহ আবদুল্লাহ’র হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট বিরোধী এবং পশ্চিমাপন্থি একজন শাসকের অবসান হলো।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

টেকসই অভিযোজনের কৌশলগুলো জানানো গণমাধ‌্যমের দায়িত্ব

খাগড়াছড়িতে আগুনে পুড়ল ২০ দোকান

প্রত্যাশা মতো চান্স না পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা

সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

দিনাজপুরে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাইটেক পার্কের চুক্তি

মেলায় আবেদন করে চাকরি পেলেন ৪১ তরুণ

ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল গৃহবধূর মরদেহ

চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সম্পাদক ড. আবু নোমান

১০

চট্টগ্রামে তীব্র দাবদাহে মুসল্লির মৃত্যু

১১

ছাত্রলীগের উদ্যোগে রাবিতে বৃক্ষরোপণ

১২

তীব্র দাবদাহে নারীর মৃত্যু

১৩

পাবিপ্রবিতে ফ্রি শরবত বিতরণ

১৪

রশি দিয়ে টেনে রাখা হয়েছে ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি

১৫

চিরকুট লিখে মুয়াজ্জিনের আত্মহত্যা

১৬

ঢাবির জসীম উদদীন হলে ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপণ

১৭

টাঙ্গাইলে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

১৮

বৃষ্টি চান না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকেরা

১৯

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

২০
*/ ?>
X