কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৩১ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী, ঘোষণা যে কোনো সময়

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক। ছবি : সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। সাত মাস ধরে চলা এ যুদ্ধে দীর্ঘ আলোচনার পর আবার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে শনিবার এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনের আল কুদস সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আশরকও একই তথ্য জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, দুপক্ষই চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামাস এ বিষয়ে ঘোষণা দিবে।

হামাসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল কুদসকে জানান, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ছাড়াই কারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হয়েছেন।

তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে শুধু নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর হামাসের কাছে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা রয়ে যাবে। এটিকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সুবিধা নেওয়া হবে।

এদুটি সংবাদমাধ্যম ছাড়াও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল১২ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র গ্যারান্টি দিয়েছে- চুক্তির তৃতীয় ধাপের সমাপ্তির পরে ইসরায়েল গাজা থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করবে। হামাসের এ শর্তটি ইসরায়েল বারবারই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করার জন্য মার্কিন গ্যারান্টি সম্পর্কিত আরব মিডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লিখিত চুক্তিগুলো এখনো পর্যালোচনা করেনি।

এর আগে সাম্প্রতিক চুক্তির একটি খসড়া হাতে এসেছে বলে জানিয়েছিল লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল মায়েদিন টিভি। ওই সময়ে খসড়াটি জনসম্মুখে তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমটি।

মূলত ৩টি ধাপে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। খসড়া প্রস্তাবে কেবল বন্দি বা জিম্মি বিনিময়ের কথাই উল্লেখ করা হয়নি, গাজাসহ এই অঞ্চলে একটি শান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। আল মায়েদিনের প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার পূর্বাংশে সরে যাবে এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখল করা সীমান্তে চলে যাবে।

খসড়াতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির শুরুতে দৈনিক অন্তত আট ঘণ্টা ইসরায়েলি যুদ্ধ বা পরিবহন কোনো বিমানই গাজার আকাশসীমায় আসবে না। আর যেদিন যেদিন বন্দি-জিম্মি বিনিময় হবে, সে দিন গাজায় অন্তত ১০ ঘণ্টা আগে থেকে কোনো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উড়বে না।

যুদ্ধবিরতির সপ্তম দিনে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা মধ্যাঞ্চল দিয়ে চলে যাওয়া সালাহউদ্দিন স্ট্রিটের সমান্তরালে থাকা আল রশিদ স্ট্রিট থেকে সরে গিয়ে আরও পূর্ব দিকে ওঠে যাবে। একই সময়ে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা চালু এবং বেসামরিক গাজাবাসী তাদের নিজ বাড়িতে ফেরা শুরু করবে।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির ২২ দিনের মধ্যে হামাসের হাতে জিম্মি এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী সেন্ট্রাল গাজা থেকে সরে গিয়ে গাজা-ইসরায়েল বিভক্তকারী সীমানায় চলে যাবে। এই সময়েও বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী নিজ বাড়িতে ফিরতে থাকবে। এ ছাড়া, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপেই গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও জ্বালানি প্রবেশ করতে থাকবে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস এখন পর্যন্ত জীবিত থাকা ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। একজন জিম্মির বিপরীতে ২০ জন করে ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনি নারী বা শিশু মুক্তি পাবে এবং এই মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল আর কখনোই গ্রেপ্তার করবে না, সেই নিশ্চয়তাও দিতে হবে।

তবে হামাসের হাতে জিম্মি প্রত্যেক ইসরায়েলি নারী সেনার বিপরীতে ইসরায়েলকে ৪০ জন করে ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। খসড়া প্রস্তাব অনুসারে, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে তিনজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং প্রতি তিন দিন পরপর হামাস তিনজন করে মুক্তি দেবে।

এ ছাড়া, যুদ্ধবিরতির ১৪তম দিনে যুদ্ধাহত হামাস সেনাসহ অন্য সশস্ত্র সদস্যদের রাফাহ হয়ে মিসরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে উন্নত চিকিৎসার জন্য। প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা শুরু করবে যাতে এই অঞ্চলকে শান্ত রাখা যায়। প্রথম ধাপের প্রতিটি পর্যায়ে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ সবাই গাজা উপত্যকায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণসহায়তা নিশ্চিত করবে।

প্রস্তাবিত খসড়া অনুসারে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপেই গাজার বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনরায় গড়ে তুলতে কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে একটি সমন্বয়কারী কমিটি গঠিত হবে, যা ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স ফোর্সকে প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। এ ছাড়া, বাস্তুচ্যুতদের জন্য অস্থায়ী আবাস গড়ার কথাও বলা হয়েছে খসড়ায়।

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ বিস্তৃত হবে ৪২ দিন। সেখানে উভয়পক্ষই একটি স্থায়ী স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি সাধারণ ভিত্তিতে একমত হবে। তবে এই ধাপে মূলত, স্থিতাবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিধ্বস্ত গাজা গড়ে তোলার তুলনামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আয়োজন নিশ্চিত করা হবে।

তৃতীয় ধাপও বিস্তৃত হবে ৪২ দিন। এই ধাপে উভয় পক্ষের হাতে থাকা নিহত যোদ্ধা বা সেনাদের মরদেহ বিনিময় করা হবে। গাজা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োগ শুরু করা হবে। এই সময় থেকেই ফিলিস্তিনি পক্ষগুলো (হামাসসহ অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো) গাজায় কোনো সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখ খুলল তুরস্ক

বছরে পাঁচ কোটি আয়, তবু কেন ঝাড়ুদারের কাজ করেন এই ব্যক্তি?

মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে মজিদ মল্লিক ফাউন্ডেশন

ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে খুলনার রাজনীতিতে পারভেজ মল্লিক

শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও আমাদের অদূরদর্শিতা

গাজামুখী শেষ নৌযান ম্যারিনেটও আটক

বাংলাদেশসহ যে ১৭ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত

জুবিনের শেষ মুহূর্তের ভিডিও করা সহশিল্পী গ্রেপ্তার

যে কারণে রাজধানীতে বাস থামিয়ে গুলি-আগুন

‘আজাদ কাশ্মীর’ মন্তব্যে বিতর্ক, মুখ খুললেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক

১০

গুগল ম্যাপের গোপন বৈশিষ্ট্য, যা জানেন না অনেকেই

১১

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য চমক রেখে জার্মানির দল ঘোষণা

১২

নদী ইজারা দিল মসজিদ কমিটি

১৩

চালু হচ্ছে ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট

১৪

বড় ধাক্কার সামনে লিভারপুল

১৫

মেটা কি ফোনের মাইক্রোফোন দিয়ে আপনার কথা শোনে? যা বলছেন ইনস্টাগ্রাম প্রধান

১৬

তারা যে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে সেটা দারুণ ব্যাপার: সাকিব

১৭

সপ্তাহের সেরা চাকরির বিজ্ঞপ্তি, পদ সংখ্যা ৯৬৩

১৮

ফুটবলে প্রথমবার দেখা গেল ‘গ্রিন কার্ড’, কীভাবে কাজ করবে?

১৯

ডাম্প ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত

২০
X