কথায় আছে জনপ্রিয়তা কাছের মানুষকেও শত্রু বানিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনের গণমানুষের নেতা মারওয়ান বারগুতির ক্ষেত্রেও এই কথাটা সত্য বলেই প্রমাণ হচ্ছে।
দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের কারাগারে তিনি বন্দি। তারপরও বারগুতির জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং তিনি এখনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এমনকি জনপ্রিয়তায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক নেতাও তার ধারে কাছে নেই।
দুর্বল প্রকৃতির নেতা আব্বাস প্রায় দুই দশক ধরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেননি তিনি।
উল্টো তার ইসরায়েলঘেঁষা মনোভাবের কারণে ফিলিস্তিনিদের কাছেই তিনি বিতর্কিত। এবার নিজের স্বদেশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বারগুতিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রাখতে চক্রান্ত শুরু করেছেন ৮৮ বছর বয়সী আব্বাস।
ইসরায়েল ও হামাসের সম্ভাব্য বন্দি বিনিময়ের চুক্তির মাধ্যমে বারগুতির মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর গলা শুকিয়ে গেছে আব্বাসের।
তাই এই চুক্তি থেকে ফাতাহ নেতা বারগুতিকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, প্যালেস্টে-নিয়ান জেনারেল ইন্টি-লিজেন্সের পরিচালক মাজিদ ফারাজ এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গা-নাই-জেশন বা পিএলও’র নির্বাহী কমিটির মহাসচিব হুসেইন আল-শেখ এমন অনুরোধ করেছেন।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেতাদের বিশ্বাস বারগুতিকে মুক্তি দিলে আব্বাসের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
জানা যাচ্ছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় পরোক্ষভাবে যুক্ত একটি পক্ষ, যুক্তরাষ্ট্র নাকি এমন প্রস্তাবে রাজিও হয়েছে। বন্দি বিনিময়ের জন্য হামাস যে তালিকা দেবে, সেখানে বারগুতির নাম থাকবে বলে জানা যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় নিজের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে চাইছেন আব্বাস।
বারগুতির মুক্তি নিয়ে শুধু আব্বাসই নন, আপত্তি রয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুরও। বারগুতি মুক্তি পেলে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের যে আলোচনা, তা থেকে তাকে বাদ দেওয়া যাবে না।
তাই অনেকের বিশ্বাস, যে কোনো উপায়ে বারগুতিকে কারাগারে বন্দি রাখবেন নেতানিয়াহু। গেল মার্চে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক আরাবি২১ নিউজ সাইট জানায়, বারগুতিকে মুক্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলেরও আপত্তি রয়েছে।
পশ্চিম তীর ও গাজায় বিপুল জনপ্রিয় ফাতাহ’র নেতা বারগুতি ২০০২ সাল থেকে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সম্প্রতি প্যালেস্টে-নিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ এক জরিপে জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আব্বাসকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করবেন ৬৪ বছর বয়সী বারগুতি। তবে এ জন্য বারগুতিকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হবে।
মন্তব্য করুন