বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশ ছেড়ে পালিয়ে কোথায় যান ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা?

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন নয়, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধানরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। নেপালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। টানা বিক্ষোভ সহিংসতার মধ্যে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) পদত্যাগের ঘোষণা দেন অলি। এরপর গুঞ্জন উঠেছে দেশ ছেড়েছেন তিনি, আশ্রয় নিচ্ছেন দুবাই, ভারত অথবা অন্যকোনো দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইউনিভার্সিটির গবেষক আবদেল এসক্রিবা ও ড্যানিয়েল ক্রাকমারিক উল্লেখ করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকরা সাধারণত এমন দেশ বেছে নেন যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মিল আছে, যা ভৌগোলিকভাবে দূরে নয়, এবং যেখানে অতীতে অন্য স্বৈরশাসকরা আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া তারা সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশকেই পছন্দ করেন। সাধারণত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে তারা আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন না। অতীতে দেখা গেছে, মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারদের অনেকেই সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছে। তবে অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার তালিকাও ছোটো নয়। আসুন জেনে নিই, বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা দেশ ছেড়ে কোথায় পালিয়েছেন?

ইউক্রেনের ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ

ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০১৪ সালে গণবিরোধের মুখে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। তিনি রাশিয়াপন্থি নীতির কারণে রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভের মুখে কার্যত ক্ষমতা হারান এবং তখন থেকে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।

উগান্ডার ইদি আমিন

উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন ১৯৭০-এর দশকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত ছিলেন। জনরোষের কারণে ১৯৭৯ সালে তিনি দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে যান। এর আগে তিনি কিছুদিন লিবিয়া এবং ইরাকে অবস্থান করেছিলেন। প্রায় দুই দশক সৌদি আরবের জেদ্দায় বিলাসবহুল বাড়িতে সময় কাটান, যেখানে তার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল সৌদি সরকার। ২০০৩ সালে তিনি রিয়াদের একটি হাসপাতালে মারা যান।

তিউনিসিয়ার বেন আলি

তিউনিসিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বেন আলি ২০১১ সালে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। ২৩ বছর দেশ শাসনের পর তিনি দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। সেখানে তার অবস্থান নিয়ে কম তথ্য প্রকাশিত হয়, কেবল ২০১৩ সালে ইন্সটাগ্রামে তার একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ পায়। ২০২৩ সালে জেদ্দার হাসপাতালে তিনি মারা যান।

আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ২০২১ সালে তালেবান যোদ্ধাদের আগমনের সময় কাবুল থেকে পালিয়ে যান। প্রথমে তার গন্তব্য অস্পষ্ট থাকলেও পরবর্তীতে জানা যায়, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, রক্তপাত এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ফিলিপিন্সের মার্কোস

ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দো মার্কোস ১৯৮৬ সালে জনবিক্ষোভ এবং বিরোধীদের প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে গুয়ামে যান। মার্কোসকে দেশ ছেড়ে পালাতে সহায়তা করে আমেরিকান এয়ারফোর্স। পরে মার্কোসের জন্য হাজার হাজার ফিলিপিন্সীয় রাস্তায় আনন্দ উদযাপন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে হাওয়াইতে মারা যান।

মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি

ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি ইসলামি বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি প্রথমে মিশরে যান, তারপর মরক্কো, বাহমা দ্বীপপুঞ্জ ও মেক্সিকো হয়ে আমেরিকায় পৌঁছান। ইরানের বিপ্লবীরা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দখল করে জিম্মি নেওয়ার পর তিনি আবার পানামা ও মিশরে যান। ১৯৮০ সালে কায়রোতে তার মৃত্যু হয়।

পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ

পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সৌদি আরব ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় নির্বাসনে যান। পরে ২০১৯ সালে লন্ডনে নির্বাসনে যান এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে আসেন।

পাকিস্তানের পারভেজ মুশারফ

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ ২০০৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে যান। ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য দুবাই যান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।

থাইল্যান্ডের থাকসিন শিনাওয়াত

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত ২০০৬ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি লন্ডনে নির্বাসনে যান এবং ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসেন।

লাইবেরিয়ার চার্লস টেলর

লাইবেরিয়ার চার্লস টেলর ২০০৩ সালে গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ক্ষমতা ছেড়ে নাইজেরিয়ায় চলে যান। তাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কার গোটাবায়া রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার গোটাবায়া রাজাপাকশা ২০২২ সালে গণআন্দোলনের মুখে প্রথমে সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন। পরে তিনি থাইল্যান্ডে যান এবং দুই মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসেন।

বাংলাদেশের শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। সামরিক হেলিকপ্টারে করে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান তিনি। এখন তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।

সিরিয়ার বাশার আল আসাদ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দীর্ঘ ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী হামলার কারণে দামেস্ক ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি মস্কোয় অবস্থান করছেন।

এই সমস্ত ঘটনা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জনরোষ এবং সামাজিক চাপের মুখে ক্ষমতাচ্যুত শাসকরা প্রায়শই দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। নেপালের কেপি শর্মা অলিও এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অনুরূপ পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘হা হা’ ইমোজি দিয়ে মধ্যরাতে ভিপি প্রার্থী উমামার পোস্ট

ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট হামিমের

ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদ

ছয় হলের ফল প্রকাশ, শীর্ষ তিন পদেই এগিয়ে শিবির

তিন হলের ফল ঘোষণা, শিবির প্যানেল এগিয়ে 

ডাকসু নির্বাচন : নেতাকর্মীদের যে নির্দেশ দিল জামায়াত

সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ এস এম ফরহাদের

শাহবাগে মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রদল ও শিবির সমর্থকরা

ডাকসুর ফলাফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

ডাকসুর ফল ঘোষণা কীভাবে, জানালেন চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা

১০

ডাকসুর ভোট গণনায় সময় লাগার কারণ জানালেন অধ্যাপক শামীম রেজা

১১

বড় জয়ে এশিয়া কাপে দুর্দান্ত শুরু আফগানদের

১২

ছাত্রদল নেতার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, ঢাবি শিক্ষক বললেন, ‘এই কষ্ট কোনোদিন ভুলব না’

১৩

ডাকসু : উত্তেজনা নিরসনে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কথা বলেছে সরকার

১৪

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু কবে, জানাল ক্রিকইনফো

১৫

তিন হলের ভোট গণনা শেষ

১৬

শিবির ট্যাগ দিয়ে ডাকসুর নারী প্রার্থীর স্বামীকে হেনস্তা

১৭

জামাল-তপুদের নিরাপদে ফেরাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার

১৮

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে স্ববিরোধী তদন্ত সিআইডির

১৯

নেপালে বাংলাদেশের টিম হোটেলে হামলার চেষ্টা

২০
X