

দুনিয়ার সব মানুষের কাছে যেটা বিরুক্তকর ও বিশৃঙ্খলার কাজ, তার কাছে সেটাই যেন একমাত্র আনন্দের উপলক্ষ। নোংরা ঘর, অগোছালো জীবনের আমরা হাঁপিয়ে উঠলেও এমন একজন আছেন যার কাছে এই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার সবচেয়ে আনন্দের কাজ। তিনি ঘরবাড়ি পরিষ্কারের কাজটি এতটাই ভালোবাসেন, এবার নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছেন শুধু মানুষের ঘর বিনা পয়সার পরিষ্কার করে দিবেন বলে। শুনতে পাগলাটে মনে হলেও ফিনল্যান্ডের ২৯ বছর বয়সী তরুণী অরি কাতারিনা এমন অসম্ভব কাজকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে সার্ভিস ম্যানেজারের চাকরি করতেন অরি। কিন্তু হঠাৎ করেই তার মাথায় এক অদ্ভুত ভুত চেপে বসে। যেই ভাবা সেই কাজ, দুম করে নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পরেন বিশ্ব ভ্রমণে। তার উদ্দেশ্য একটাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ধুলোবালি, ময়লা, আবর্জনা ঘেটে ঝকঝকে তকতকে করে তোলা। তার এমন অভিনব কাজের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরতেই রীতিমতো তারকা বনে গেছেন অরি। লোকজন ভালোবেসে তাকে ডাকছে ক্লিনিং কুইন নামে।
অরির এই যাত্রা শুরু হয় এক বিধবা মায়ের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যদিয়ে। ৩ সন্তানের মা ওই নারী স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েন। নিজের বসবাসের একমাত্র ঘরটি এসময় ছিল একেবারেই এলোমেলো, আর ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিপূর্ণ। অরি টানা ২ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে ওই নারীর ঘরটি পরিষ্কার করে দেন। তার কাজ শেষ হতেই ওই মা আর তার সন্তানরা অরিকে আন্তকিভাবে ধন্যবাদ জানান। আর এ ঘটনাটি গভীরভাবে দাগ কাটে তার মনে।অরি বুঝে যান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজটি শুধু ঘরবাড়ি নয়, মানুষের জীবনও বদলে দিতে পারে মুহূর্তেই।
এর পর থেকে তিনি প্রতি মাসে অন্তত ৩টি করে ঘর বিনা পয়সায় পরিষ্কার করে দিতে শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই তা তুমুল ভাইরাল হয়। একে একে আসতে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির স্পনসরশিপ। আর এখন অরির ভ্রমণ ও ঘরবারি পরিষ্কারের খরচ বহন করে বিভিন্ন বিশ্ববিখ্যাত পরিচ্ছন্নতা–পণ্যের ব্র্যান্ড। টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা অন্তত ৭৮ লাখেরও বেশি।
কাজের ক্ষেত্রে অরি বেছে নেন সবচেয়ে বিপর্যস্ত ঘরগুলোকেই—যেখানে হতাশায় ডুবে থাকা মানুষ নতুন শুরুর আশা নিয়ে তার কাছে সাহায্য চান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য—এমনকি ইউরোপের নানা প্রান্তে গিয়েও তিনি মানুষের ঘর অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছেন একেবারে বিনে পয়সায়। দুই দিন থেকে শুরু করে কোথাও চার দিনও সময় লেগেছে এসব কাজে। আর তা করতে গিয়ে বিচিত্র সব অবিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন এই তরুণী, যা তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই শেয়ার করেন তার অনুসারীদের সঙ্গে। একবার তিনি এমন এক তরুণীর ঘর পরিষ্কার করে দেন, যে মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতায় ৬ বছরেও বেশি সময় ধরে নিজের ঘর পরিস্কার করেননি।
এসব ঘর পরিস্কার করতে অরি ব্যবহার করেন খুবই প্রচলিত ও সাধারণ উপকরণ যা আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। ভিনেগার, ডিশ সোাপ, স্ক্র্যাপার, স্ক্রাব ড্যাডি স্পঞ্জ, মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়েই তিনি নিজের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। অরি বলেন, ঘরবাড়ি পরিস্কার করতে মূল্যবান ক্লিনিং গ্যাজেট বা দামি রিএজেন্টের দরকার নেই বরং প্রয়োজন গুরুত্ব ও ধৈর্যের। তবে রান্নাঘর, চুলা ও ওভেনের জেদি দাগ ও ময়লা দূর করতে তিনি ক্লিং লিল্ম ব্যবহার করেন-যা খুবই কার্যকরী।
হতাসাগ্রস্থ মানুষের জীবনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেই অরির এই অভিনব উদ্যোগ। একবার তিনি এক মাতাল মায়ের ঘর পরিষ্কার করে দেন যার সন্তান তাকে ছেড়ে গিয়েছিলো কেবল অপরিষ্কার ঘরের কারণে। পরে জানা যায়, ঘর পরিষ্কার হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে পালানো সন্তান আবারও মায়ের কাছে ফিরে আসে। অরি তার এই কাজটিকে জীবনের সবচেয় সেরা কাজ হিসেবে মনে করেন।
নিজের ঘরে অবশ্য বেশ সহজ-সরল জীবনজাপনই করেন এই তরুণী। সপ্তাহে একদিন নিজের মতো করে সবকিছু গোছগাছ করেন। তার মতে, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা কোনো যন্ত্রণার কাজ নয়, বরং এটা সবসময় হওয়া উচিত নির্মল আনন্দের। সারাদিনের ব্যস্থ সময় থেকে মাত্র ১৫ মিনিট বের করে সময় দিলেই যেন অনেক কিছু পাল্টে যায়। আর তাইতো অরি কাতারিনা বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন্ন বিনামূল্যে অগোছালো ঘরগুলোতে নতুন করে পরিচ্ছন্নতার আলো জ্বালিয়ে দিতে।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে...
মন্তব্য করুন