শত্রুপক্ষের অন্তরে কাঁপুনি ধরাতে জুড়ি নেই ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট এয়ার কুশন এল-সি-এ-সি’র। বর্তমান বিশ্বে উভয়চর এই সামরিক যান ব্যবহার করে কেবল মার্কিন নৌবাহিনী ও জাপানের মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স- জে-এম-এস-ডি-এফ।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যারো-জেট জেনারেল, লুইসিয়ানাভিত্তিক বেল অ্যারো-স্পেস সূত্র ও ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেছে, সাগরের মাঝখানে থাকা জাহাজ থেকে উপকূলে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈন্য পরিবহনে ব্যবহার হয়ে থাকে এল-সি-এ-সি। তবে ভবিষ্যতে এই জায়গাটা দখল করে নিতে পারে শিপ-টু-শোর কানেকটর-এস-এস-সি।
বর্তমান বিশ্বে এলসিএসি একমাত্র যান যেটি উভচর জাহাজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রজন্মের এম-১ আবরাম ট্যাংক উপকূলে পরিবহন করতে সক্ষম। আধুনিক স্থল যুদ্ধ ব্যবস্থায় শক্তিশালী সমরাস্ত্র এম-১ আবরাম বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ট্যাংক। এক একটি এম-১ আবরাম ট্যাংকের ওজন ৭৩.৬ শর্ট টন বা ৬৬.৮ টন। আর উচ্চগতির এল-সি-এ-সি অনায়েসেই এম-১ আবরাম ট্যাংক জল থেকে স্থলে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
সম্পূর্ণ উভচর যান এল-সি-এ-সি ৬০ থেকে ৭৫ টন পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে। এল-সি-এ-সি’র দ্রুততা মার্কিন নৌবাহিনীর সক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। পূর্ণ লোড নিয়ে একটি এলসিএসি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ নটের বেশি বা ৭৪.০৮ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে।
আর এল-সি-এ-সি রেঞ্চ ৩০০ মাইল। এয়ার কুশন প্রযুক্তির কারণে এল-সি-এ-সি বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ উপকূলে পৌঁছতে সক্ষম। অথচ প্রচলিত ল্যান্ডিং ক্রাফটের সহায়তায় বিশ্বের মাত্র ১৫ শতাংশ উপকূলের নাগাল পাওয়া সম্ভব।
১৯৭০-এর দশকে টেস্ট ভেহিক্যাল অ্যাম-ফি-বিয়াস অ্যাসল্ট ল্যান্ডিং ক্রাফট (এ-এ-এল-সি)-র সঙ্গে আধুনিক এল-সি-এ-সি’র কনসেপ্ট ডিজাইন শুরু হয়। একপর্যায়ে জে-ই-এফ-এফ-এ ও জে-ই-এফ-এফ-বি নামে দুটি প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়।
জে-ই-এফ-এফ-এ তৈরি করে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যারো-জেট জেনারেল। আর জে-ই-এফ-এফ-বি তৈরি করে লুইসিয়ানাভিত্তিক বেল অ্যারো-স্পেস। এই দুটি ক্রাফট কারিগরি ও অপারেশনাল সক্ষমতা পূরণে সফল হওয়ার মাধ্যমেই শুরু হয় এল-সি-এ-সি’র উৎপাদন।
মার্কিন নৌবাহিনীর হাতে সর্বপ্রথম ১৯৮৪ সালে প্রথম এল-সি-এ-সি তুলে দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৬ ইনিশিয়াল অপা-রেশনাল ক্যাপা-বিলিটি অর্জনে সক্ষম হয় এল-সি-এ-সি। এর এক বছর পর ১৯৮৭ সালে এল-সি-এ-সি পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে ১৫টি ক্রাফট তৈরি পর দুটি মার্কিন কোম্পানিকে এল-সি-এ-সি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। টেক্স-ট্রন মেরিন অ্যান্ড ল্যান্ড সিস্টেমস (টি-এম-এল-এস) এবং অ্যাভন-ডেল গালফ-পোর্ট মেরিন, টি-এম-এল-এস বাকি এল-সি-এ-সিগুলো তৈরি করে।
মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য এখন পর্যন্ত ৯১টি এল-সি-এ-সি তৈরি করা হয়েছে। সর্বশেষ এল-সি-এ-সি-টি ২০০১ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এল-সি-এসি প্রথমবারের মতো ১৯৮৭ সালে উভচর জাহাজ ইউ-এস-এস জার্মান-টাউন (এল-এস-ডি ৪২)-তে মোতায়েন করা হয়। এল-এইচ-এ, এল-এইচ-ডি, এল-এস-ডি ও এল-পিডিসহ সব উভচর জাহাজে এলসিএসি রয়েছে এবং এসব জাহাজ থেকেই এলসিএসি পরিচালনা করা হয়ে থাকে। একটি এলসিএসিতে পাঁচজন ক্রু থাকে। অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি পরিবহন ছাড়াও সৈন্যদের উপকূলে পৌঁছে দেওয়া, সরিয়ে নেওয়া, মাইন কাউন্টার-মেজার অপারেশনের মতো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয় এলসিএসি।
সার্ভিস লাইফ এক্সটেনশন প্রোগ্রামের আওতায় বর্তমান এল-সি-এ-সি-গুলোর সময়কাল আরও ১০ বছর বাড়ানোর কাজ চলছে, যাতে এ ধরনের বহুমাত্রিক ক্রাফটকে আরও ব্যবহার করা যায়। এদিকে ২০১২ সালে টেক্স-ট্রনকে নতুন একটি কাজের চুক্তি দেয় মার্কিন সরকার। ওই চুক্তির আওতায় নতুন শিপ টু শোর কানেকটর (এস-এস-সি) ক্রাফট তৈরি করতে বলা হয়, যেন সেগুলো সময় ফুরিয়ে যাওয়া এল-সি-এ-সি-গুলোর জায়গায় প্রতিস্থাপন করা যায়।
মন্তব্য করুন