এজবাস্টনে ম্যাচটা যেন ছিল ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে তরুণ অধিনায়ক শুভমান গিল হয়ে উঠলেন রেকর্ড বইয়ের এক উজ্জ্বল নাম, আর পেসার আকাশ দীপ ঢেলে দিলেন স্বপ্নের পারফরম্যান্সে গড়া এক ম্যাচ। চলুন দেখা যাক পরিসংখ্যান যেভাবে দেখছে ভারতের সেই ঐতিহাসিক জয়
৩৩৬ রানের বিশাল জয়
বিদেশের মাটিতে ভারতের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। এর আগে ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩১৮ রানে হারিয়েছিল বিরাট কোহলির দল। সবমিলিয়ে এটি ভারতের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ বড় জয় এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয়, ২০২৪ সালে রাজকোটে পাওয়া ৪৩৪ রানের জয়কে বাদ দিলে।
ইতিহাস গড়লেন গিল
মাত্র ২৫ বছর ৩০১ দিন বয়সে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ে অধিনায়ক হিসেবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গিল। পেছনে ফেলেছেন সুনীল গাভাস্কারকে, যিনি ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডে ২৬ বছর বয়সে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছিলেন। সব মিলিয়ে গিল ভারতের হয়ে টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া চতুর্থ সবচেয়ে তরুণ—তার আগে ছিলেন পাটৌদি, শাস্ত্রী ও শচীন।
এজবাস্টনে ১৯ ম্যাচের অপেক্ষার অবসান
এশিয়ান দলগুলোর জন্য এজবাস্টন যেন ছিল ব্যর্থতার প্রতীক। ১৯টি টেস্ট খেলে এবারই প্রথম কোনো এশিয়ান দল জয় পেল এই ভেন্যুতে। ভারতের জন্য এটি ছিল নবম ম্যাচ—সাতটি হারে, একটি ড্র, আর এবার সেই বহু কাঙ্ক্ষিত জয়।
আকাশ দীপের ‘দীপজ্বালা’
৪১.১ ওভার বল করে ১০ উইকেট—১০/১৮৭। আকাশ দীপ ছুঁয়েছেন এক অনন্য উচ্চতা। ইংল্যান্ডে ভারতের হয়ে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন তার দখলে, ভেঙেছেন চেতন শর্মার ১৯৮৬ সালের ১০/১৮৮। বিদেশে ভারতের হয়ে শেষবার টেস্টে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন ইশান্ত শর্মা (২০১১, বার্বাডোসে), আর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে শেষবার পেয়েছিলেন উমেশ যাদব (২০১৮, হায়দরাবাদে)।
সিরাজ-আকাশ দীপ: ভয়ংকর জুটি
নতুন বল হাতে আকাশ দীপ ও মোহাম্মদ সিরাজ দু’জন মিলে নিয়েছেন ১৭টি উইকেট। ভারতের ইতিহাসে টেস্টে নতুন বল হাতে ওপেনিং জুটি হিসেবে যৌথভাবে সর্বোচ্চ—এর আগে এমনটা ঘটেছিল ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (ইরফান-পাঠান ও জাহির খান) এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে (ইশান্ত-উমেশ)।
এক ম্যাচে ভারতের রান ১০১৪!
৫৮৭ ও ৪২৭/৬—এই দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারতের সংগ্রহ ১০১৪ রান, যা টেস্ট জয়ে কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৩৪ সালের ওভাল টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ১০২৮ রানের রেকর্ডই শুধু এগিয়ে।
পেছনে দাঁড়িয়ে ঝড় তুললেন স্মিথ
জেমি স্মিথের ২৭২ রান (১৮৪* ও ৮৮) ইংল্যান্ডের ইতিহাসে উইকেটরক্ষকদের মধ্যে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ। বিশ্ব ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক হিসেবে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস—শীর্ষে আছেন জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার।
ব্যাজবল বিপর্যস্ত
বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে ইংল্যান্ড ব্যাটাররা কখনও এতটা রক্ষণাত্মক হননি। চতুর্থ ইনিংসে তাঁদের ৫৪.৭% বল ছিল ডিফেন্স বা লেফট—ব্যাজবল যুগে এটিই সর্বোচ্চ। তাতেও লাভ হয়নি—ইংল্যান্ডের ৭ ব্যাটার ফিরেছেন শূন্য রানে, যা টেস্ট ইতিহাসে ইংল্যান্ডের প্রথম এবং যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
এজবাস্টনের ঐতিহাসিক ম্যাচটা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এক 'স্টেটমেন্ট' জয়। নেতৃত্বে গিল, আক্রমণে দীপ, আর রানে ভাসছে গোটা দল—ভারতের ভবিষ্যৎ এখন আলোয় মোড়ানো।
মন্তব্য করুন