মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরানকে কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে দিতে চায় না পশ্চিমারা। এ জন্য তারা দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামরিকসহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার জাল বিসিয়ে রেখেছে। কিন্তু তেহরান এসব নিষেধাজ্ঞা মুহূর্তেই ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
ইরানকে নিশ্চিন্তে রেখেছে তাদের বিজ্ঞানীরা। দেশটির ইমলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির বিজ্ঞানীদের সাহায্যে অস্ত্র শিল্পের বিশাল এক বাজার তৈরি করেছে তেহরান।
ইরানি বিজ্ঞানীদের কদর আরেক জায়াগায়। বিদেশি অস্ত্রের কপি করে অর্থাৎ রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে মুহূর্তেই নতুন অস্ত্র তৈরি করতে পারেন তারা। এ ক্ষেত্রে ইরানি বিজ্ঞানীদের ধারে কাছেও নেই কোনো দেশ। রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য তেহরানকে চরম ভয় পায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ অন্যান্য পশ্চিামা দেশগুলো।
গত বছর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে সাদিদ থ্রি সিক্সটি ফাইভ তৈরি করেছে ইরান। সাদিদ ইরানের একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র। এই অস্ত্রটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রেথিয়ন এবং লকহিড মার্টিনের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল সিস্টেম থেকে বিপরীত প্রকৌশলের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো মার্কিন অস্ত্র ইরান হাতে পেল কীভাবে? মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বন্ধু ইরানের হাতে এসব অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিনিমিয়ে ইরানও তাদের শক্তিশালী ড্রোন রাশিয়াকে দিয়েছে। যে ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন।
রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা ইরানের সাদিদ-৩৬৫ নামক ক্ষেপণাস্ত্রটি আট কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে অবস্থানরত বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক ধ্বংস করতে সক্ষম। এই গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে এবং ট্যাংক সুরক্ষাব্যবস্থা বা একেএস ভেদ করতে পারে।
রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ইরানের স্থানীয়ভাবে তৈরি করা সফল অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে তুফান অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিজিএম সেভেন্টি ওয়ান টিওডব্লিউ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র থেকে তৈরি করা হয়েছিল।
সেন্টার ফর এ নিউজ আমেরিকান সিকিউরিটির বিশেষজ্ঞ জোনাথন লর্ড সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- ইরান অত্যন্ত সফলভাবে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীত ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে এবং তুফান তৈরি করেছে, যা প্রায় আসল অস্ত্রের মতো। ইরানের তুফান অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রটি এখন তেহরানের মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে। যা ইসরায়েল এবং পশ্চিমাদের আতঙ্কিত হওয়ার আরেকটি কারণ।
এর আগে ২০১১ সালে ইরানের সামরিক বাহিনী মার্কিন ড্রোন আর কিউ সেন্টিনেল আটক করতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশটি সেন্টিনেলের একটি নতুন কপি তৈরি করে। ইরানের শাহেদ ড্রোনগুলোর সঙ্গে সেন্টিনেলের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গেছে।
এই অবস্থায় পশ্চিমারা ইরানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করতে এবং তেহরানের প্রক্সি এবং মিত্রদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চরম ভয় পাচ্ছে। কারণ ইরানের হাতে পশ্চিমাদের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্র চলে গেলেই তারা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এর চেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র তৈরি করে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে।
মন্তব্য করুন