মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দেশ পাকিস্তান। একারণে বিশ্বরাজনীতি ও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে ইসলামাবাদকে আলাদা চোখেই দেখা হয়। মুসলিম বিশ্বের একতা ও সম্প্রীতির প্রশ্নে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ জরুরি মনে করে অনেকে। আর এই ধারণার বাইরে নয় মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরানও।
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই পশ্চিমা আধিপত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র তারাই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য তেহরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেটিকে কেন্দ্র করে যে কোনো মুহূর্তে ইরানে ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের তেহরান সফরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। প্রশ্ন উঠছে- তবে কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবার ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান?
সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গাজায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অপরাধ বন্ধে ইরান ও পাকিস্তানের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। বিশেষ করে পাকিস্তানের পরমাণু শক্তিকে ইঙ্গিত করেন তিনি। একইসঙ্গে ইসলামি দেশগুলির মধ্যে ঐক্যেরও আহ্বান জানান খামেনি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এমন আহ্বানের পরপরই ইরান সফরে গেছেন শেহবাজ শরীফ। ফলে এই সফরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
যদিও চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ইরান। ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করে তেহরান। ওই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নেরও হুঁশিয়ারি আসে উভয় পক্ষ থেকে।
তবে সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সময় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে এগিয়ে আসে ইরান। এবার তেহরান সফরে গিয়ে ‘নতুন সূচনার’ ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
তেহরান সফরে গিয়ে প্রথমে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেহবাজ। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন দেবে পাকিস্তান। এছাড়া ইরান পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ রুখতে যৌথ পদক্ষেপেরও আহ্বান জানান তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ইসলামাবাদ কখনোই তাদের ভূখণ্ডকে তেহরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেবে না। সংবাদ সম্মেলনে ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে পশ্চিমা বিশ্বের নির্লজ্জ নীরবতার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে পাকিস্তান ও ইরান ঐক্যবদ্ধ।
এরপর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। শেহবাজ বলেছেন, পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ইসরাইল বিরোধী অবস্থানে অবিচল থেকেছে। একইসঙ্গে তিনি গাজায় ৫৪ হাজার মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবতার ওপর এক ‘গভীর কলঙ্ক’ বলে আখ্যা দেন।
জবাবে খামেনি বলেছেন, ইরান ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করলে গাজায় ইসরাইলি অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। খামেনি সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এবং ইকো সংস্কার সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে পাকিস্তানকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
খামেনির সাথে শেহবাজের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য তিন বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ বিলিয়নে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র : তেহরান টাইমস
মন্তব্য করুন