সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যুগে যুগে পরিবর্তন এসেছে মানুষের খাদ্য তালিকায়। অনেক প্রসিদ্ধ খাবারের রেসিপি হারিয়ে গেছে সময়ের অতলে, আবার অনেক খাবারের আইটেম একই স্বাদে টিকে আছে হাজার বছর ধরে। তবে আজকের যুগের মুখরোচক আর লোভনীয় সব খাবারের আইটেমের ভিড়েও হারিয়ে যাওয়া হাজার বছর আগের সেসব খাবারের স্বাদ নেওয়ার ইচ্ছা জাগে আমাদের অনেকের মনে।
সম্প্রতি তুরস্কের এস্কিশেহির শহরের কাছে কুল্লুওবা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খননকাজের সময় মিলেছে তেমনই একটি হারিয়ে যাওয়া খাবারের সন্ধান। ৫ হাজার বছর আগের একটি রুটি উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় অক্ষত অবস্থায়! খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ।
খনন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, কেউ একজন রুটির টুকরোটি সেঁকে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল তার নতুন ঘর বানানোর সময়। কেন পুঁতে রাখা হয়েছিল, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভালোবাসা, পূর্ণতা বা সমৃদ্ধির কোনো রীতির অংশ ছিল সেটি। পুড়িয়ে মাটির নিচে সংরক্ষণ করে রাখার কারণে।
আবিষ্কারের পর রুটিটি রাখা হয়েছে এস্কিশেহির প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। তবে এই ইতিহাস থেমে থাকেনি কাচঘেরা শোকেসেই। শহরের প্রশাসনের উদ্যোগে, প্রত্নতত্ত্ববিদদের সহায়তায় আবার তৈরি করা হচ্ছে সেই প্রাচীন রুটি—পুরোনো উপাদান ও প্রাচীন রেসিপির ছাঁচে। ফলে ইতিহাসের স্বাদ আবারও ফিরে আসছে আজকের খাবারের প্লেটে।
এই রুটির মূল উপাদান ‘এমার গম’ আজ আর তুরস্কে মেলে না। তাই রুটি তৈরিতে বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কাভিলজা গম, ডাল ও বুলগুর। সরকারি মালিকানাধীন হাল্ক একমেক বেকারিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে হাতে গড়া ৩০০টি ‘কুল্লুওবা রুটি’। প্রতিটি ৩০০ গ্রাম ওজনের রুটি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ তুর্কি লিরায় (প্রায় ১.২৮ মার্কিন ডলার)।
রুটির স্বাদ নিতে প্রতিদিন বেকারির সামনে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। ইতিহাসের টান, নতুন স্বাদের প্রতি আগ্রহ—সব মিলিয়ে কুল্লুওবা রুটি হয়ে উঠেছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ক্রেতা সুজান কুরু বলেন, ‘আমি শুনেই চলে এসেছি, ভাবছিলাম পেয়ে যাব কি না। হাজার বছরের পুরোনো রেসিপির স্বাদ চাখার সুযোগ তো আর রোজ মেলে না!’
প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রুটির খামির তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল এক অজানা উদ্ভিদের পাতা। প্রাচীন কুল্লুওবা সভ্যতা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য বইপত্রে নেই, তবে ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ সালের দিকে হাত্তিয়ান জনগোষ্ঠী এখানে বাস করত।
রুটির এই আবিষ্কার শুধু ইতিহাসের নয়, কৃষিতেও নতুন আলো ফেলছে। মেয়র আয়শে উনলুজে বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে আমরা এখনো প্রচুর পানির ওপর নির্ভরশীল ফসল চাষ করি। অথচ পূর্বপুরুষরা খরারোধী গম চাষ করতেন। তাদের কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে।’
স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কাভিলজা গমের চাষ ফের চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ শুধু ঐতিহ্য নয়, টিকে থাকার শিক্ষাও লুকিয়ে আছে সেই প্রাচীন রুটির প্রতিটি দানায়।
সূত্র : গালফ নিউজ
মন্তব্য করুন