

পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিরাপত্তা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার দুই ছেলে। দীর্ঘ তিন সপ্তাহ ধরে খানের জীবিত থাকার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ‘কিছু ঘটনা গোপন করছে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার ছেলে কাসিম খান।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কাসিম রয়টার্সকে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে জানান, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পরিবারের কোনো সদস্য বা খানের ব্যক্তিগত চিকিৎসককে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আপনার বাবা নিরাপদ কিনা, আহত কিনা বা আদৌ জীবিত কিনা— এ সম্পর্কে কিছুই না জানা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন।
তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাস ধরে ইমরান খানের কাছ থেকে কোনো স্বাধীনভাবে যাচাইযোগ্য বার্তা তারা পাননি। তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সামনে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়— কিছু একটা লুকানো হচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারাগার কর্মকর্তা দাবি করেন, ইমরান খান সুস্থ আছেন এবং তাকে উচ্চ নিরাপত্তার অন্য কোনো স্থানে নেওয়ার পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি আছেন। তোষাখানা মামলায় সরকারি উপহার বিক্রির অভিযোগে প্রথম দণ্ড হয় তার। পরে গোপন কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস এবং আল-কাদির ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় আরও দীর্ঘ কারাদণ্ড যোগ হয়।
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) অভিযোগ করেছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ইমরান খানের নাম বা ছবি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ফলে কয়েক মাস ধরে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা একটি ঝাপসা আদালতকক্ষের ছবিই খানের সর্বশেষ দৃশ্যমান উপস্থিতি। তিনি অভিযোগ করেন, এই বিচ্ছিন্নতা ইচ্ছাকৃত। তারা ভীত—কারণ তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং গণতান্ত্রিকভাবে তাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
কাসিম ও সুলেমান ইসা খান বর্তমানে তাদের মা জেমাইমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে লন্ডনে থাকেন। তারা জানান, সর্বশেষ তারা বাবাকে দেখেছেন ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে। ওই সময়ে তিনি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
পরিবারটি আদালতের নির্দেশিত সাক্ষাৎ কার্যকর করা এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসকের প্রবেশাধিকার পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। কাসিম বলেন, তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছেও আবেদন করছেন।
তিনি বলেন, এটি শুধুই রাজনৈতিক বিরোধ নয়। এটি এক মানবাধিকার সংকট। সব দিক থেকে চাপ সৃষ্টি হওয়া জরুরি। আমরা বাবার কাছ থেকেই শক্তি পাই— কিন্তু আগে জানতে হবে তিনি নিরাপদ আছেন কিনা।
মন্তব্য করুন