ইরানের ওপর যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তাতে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মনে করেন, এই চুক্তি লঙ্ঘনের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল ল্যাভেল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইউরোপ সফরের আগে ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্পের বক্তব্যে ইসরায়েলকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠেছে।
ফিল ল্যাভেলের ভাষায়, ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েল- উভয়ের প্রতিই ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছিল ইসরায়েলের প্রতি। এমনকি তিনি নেতানিয়াহুর আচরণে প্রবল বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং সেটা বিশ্বাসঘাতকতা বলেও আভাস দেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ চুক্তি ভেঙেছে- এটা হতাশাজনক। কিন্তু আমি ইসরায়েলের কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি।
তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মতি নিশ্চিত করতে তিনি সোমবার (২৩ জুন) নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এরপর ইরানকে রাজি করাতে কাতারের কূটনৈতিক সহায়তা নেওয়া হয়। কিন্তু এর পর ইসরায়েল হামলা চালায়। এর জবাবে ইরানও সোমবার বিকেলে কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মাধ্যমে ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে।
এই হামলা পাল্টা হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরপর তিনি তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লেখেন, ইসরায়েল, বোমা ফেলা একদম বন্ধ করুন। যদি আপনারা এটা বন্ধ না করেন, তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির গুরুতর লঙ্ঘন। এখনই, এই মুহূর্তে নিজেদের পাইলটদের ফিরিয়ে আনুন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মনোভাব ইসরায়েল-মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই আচরণে ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ তিনি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করে নিজের কূটনৈতিক দক্ষতার একটি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের আচরণ সেই উদ্যোগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এই অবস্থাকে রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকরা দেখছেন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে ট্রাম্পের এই ক্ষোভ এবং নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পরিস্থিতি কূটনৈতিক সম্পর্ককে কতটা প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
মন্তব্য করুন