নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে হামলার ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি উপলক্ষে নিউইয়র্কে কনস্যুলেট ভবনে এক অনুষ্ঠান চলাকালে আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী সেখানে হামলা চালান। এ সময় তারা কনস্যুলেট অফিসে ভাঙচুরও করেন। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের (এনওয়াইপিডি) কাছে ভিডিও ও ছবিসহ প্রমাণ জমা দিয়েছে। এনওয়াইপিডি কয়েকজনকে আটক করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক প্রশাসন কী ধরনের শাস্তি দিতে পারে?
হামলাকারীদের সম্ভাব্য শাস্তি
মার্কিন আইন অনুসারে কনস্যুলেট বা দূতাবাসে হামলা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কারণ, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কনস্যুলেট ভবন একটি কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। তাই এখানে হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।
নিউইয়র্ক প্রশাসন কয়েক ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে—
ফেডারেল অপরাধ হিসেবে মামলা : যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস/কনস্যুলেটের ওপর হামলা ফেডারেল ক্রাইম হিসেবে বিবেচিত হয়। 18 U.S. Code § 970 অনুযায়ী, কোনো বিদেশি কূটনৈতিক ভবন বা এর ভেতরে সহিংসতা চালালে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
হামলায় অস্ত্র ব্যবহৃত হলে বা প্রাণহানি ঘটলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
ফৌজদারি মামলা : হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, অনধিকার প্রবেশ, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার অভিযোগ আনা হতে পারে। এসব অভিযোগে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছরের জেল এবং জরিমানার বিধান রয়েছে।
গ্রেপ্তার ও দণ্ড : হামলাকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার, জামিনে সীমাবদ্ধতা, কিংবা সরাসরি দণ্ডাদেশ হতে পারে।
এছাড়াও হামলাকারী যদি মার্কিন নাগরিক না হয় তবে সাজার পর তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে। আবার কখনো কখনো সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে নিন্দা জানায়, যা কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে এ ধরনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
তুরস্ক দূতাবাসে হামলা (ওয়াশিংটন, ২০১৭) : তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসে আলোচনায় ওঠে।
কিউবা দূতাবাসে গুলিবর্ষণ, ওয়াশিংটন (২০২০) : এক ব্যক্তি কিউবা দূতাবাসে গুলি চালায়। পুলিশ দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ফেডারেল আদালতে বিচার শুরু হয়।
ইয়েমেনে মার্কিন দূতাবাস হামলা (২০১২) : বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে ঢুকে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত নিরাপত্তা দল মোতায়েন করে এবং হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়।
এসব নজির থেকে বোঝা যায়—যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কূটনৈতিক মিশনের ওপর হামলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে থাকে। হামলাকারীরা শুধু স্থানীয় আইনে নয়, আন্তর্জাতিক আইনের আওতাতেও জবাবদিহির মুখোমুখি হতে পারে।
পরিশেষে
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলার ঘটনাটি নিছক ভাঙচুর নয়; এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা। মার্কিন কর্তৃপক্ষ যদি অতীতের মতোই কঠোর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে হামলাকারীরা গুরুতর ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নিরাপত্তা আরও শক্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন