জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিল বিএনপি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) নোটিশের জবাব দিয়েছেন তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফজলুর রহমান। পাশাপাশি তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তার বক্তব্য ভুল প্রমাণ হলে দুঃখ প্রকাশ করবেন।
মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর লিখিতভাবে শোকজ নোটিশের জবাব দেন তিনি।
আজ বিকাল ৫টার পর নয়াপল্টন কার্যালয়ে তিনি শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তার বিশেষ বার্তাবাহক এই জবাব পৌঁছে দিয়েছেন বিএনপির দপ্তরে। এটি নিয়ে ফজলুর এখন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানা গেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বরাবর পাঠানো লিখিত জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ২৪ আগস্ট রাত ৯টায় আপনার স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ আমি হাতে পাই। এরপর যথাসময়ে নোটিশের জবাব দেওয়ার সময় বাড়ানোর জন্য আমি আবেদন করি। আপনি আমাকে ২৪ ঘণ্টা সময় বৃদ্ধি করেছেন, এজন্য ধন্যবাদ। আপনার নোটিশে আমার কাছে সবকিছু জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই অভিযোগগুলোর উত্তর একত্রে দিচ্ছি।
নোটিশের জবাবে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন, অভিযোগ করা হয়েছে যে, আমি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, এই অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি। আমি কোনো দিন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিইনি।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যার পর আমিই প্রথম বলেছিলাম, তিনি একুশ শতকের প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’। আমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমি সব সময় জুলাই-আগস্ট শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, এটি সত্য নয়। আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ-রাসুলে বিশ্বাসী একজন মানুষ। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্মের ব্যবসায়ীদের (যেমন জামায়াতে ইসলামী) বিরুদ্ধে অতীতেও বলেছি, ভবিষ্যতেও বলব।
লিখিত জবাবে ফজলুর রহমান আরও বলেছেন, ‘আমার প্রিয় দল বিএনপির ক্ষতি হয় এমন কোনো কথা বা কাজ আমি করিনি এবং করবও না। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে বিচার বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে।আমি আশা করি, সুবিচার পাবো এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকব।’
এদিকে তিন মাসের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের পদ স্থগিত করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ফজলুর রহমানকে দেওয়া পদ স্থগিতের চিঠিতে বলা হয়, গত ২৪ আগস্ট আপনার (ফজলুর রহমান) নামে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। আপনি কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব না দিয়ে সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন। আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ২৫ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য পুনরায় ২৪ ঘণ্টার সময় বর্ধিত করা হয়। আপনি ২৬ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক নয়।
তথাপিও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান বিবেচনা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আপনার দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।
এখন থেকে আপনি টক শো বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুণ্ন না হয় এবং দেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতিতে আঘাত না লাগে, সে বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকবেন।
আরও পড়ুন: শোকজের জবাবে যা বললেন ফজলুর রহমান
মন্তব্য করুন