জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন আয়কর আইনে চলতি অর্থবছর থেকে জমি কেনার খরচ বেড়েছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়ানো হয়েছে উৎসে করের হার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে করহার বাড়ানোর ঘোষণার পর সম্প্রতি উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৩-এর সংশোধনে গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৯০৮ অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত করহার পরিশোধ ছাড়া কোনো দলিল-দস্তাবেজ নিবন্ধন করবেন না। এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ওপর উৎসে কর ৪ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ের পৌরসভার অন্য এলাকায় এ হার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভায় ৪ শতাংশ এবং অন্য এলাকা ১ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ উৎসে কর নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে জমি রেজিস্ট্রেশন খরচের মধ্যে রয়েছে ১ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি, ১ দশমিক ৫ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক। স্থানীয় সরকার কর দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ৩ শতাংশ। তবে সিটি করপোরেশন এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের (উপজেলাধীন নয়) অধীন সম্পত্তি হলে হস্তান্তরিত সম্পত্তির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ২ শতাংশ হবে স্থানীয় সরকার কর। এ ছাড়া জমি কেনার সময় নিবন্ধনে ই-ফি ১০০, এন-ফি ৩০০ টাকা, এনএন ফি (নকলনবিশদের পারিশ্রমিক) ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা, ১০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি দিতে হয়। নকলনবিশদের ফি প্রতি ৩০০ শব্দবিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা এর অংশবিশেষের জন্য ৩৬ টাকা।
সংশোধিত উৎসে কর বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ-সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা সর্বোচ্চ, সেই হারে কর দিতে হবে। ঢাকার কারওয়ান বাজারের ক্ষেত্রে করহার দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ অ্যাভিনিউতে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেটি কর হিসেবে গণ্য হবে। আর নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা ও গেন্ডারিয়া এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড়, তার কর দিতে হবে।
এ ছাড়া ঢাকার কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিনরোড, এলিফ্যান্ট রোড (মূল রাস্তার ১০০ ফুটের বাইরে) এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি আড়াই লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর হিসেবে ধার্য হবে। গ্রিনরোড (ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার রোড নম্বর ৩ থেকে রোড নম্বর ৮ পর্যন্ত) এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা কর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। ঢাকার উত্তরা (সেক্টর ১০-১৪), নিকুঞ্জ (দক্ষিণ), নিকুঞ্জ (উত্তর), বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকা, গেন্ডারিয়া পুনর্বাসন এলাকা, শ্যামপুর পুনর্বাসন এলাকা, আইজি বাগান পুনর্বাসন এলাকা ও টঙ্গী শিল্প এলাকায় দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড়, তা কর হিসেবে বিবেচিত হবে। ঢাকার শ্যামপুর শিল্প এলাকা, পোস্তগোলা শিল্প এলাকা, জুরাইন শিল্প এলাকায় কর হবে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় তা। ঢাকার খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা (১০০ ফুটের কম প্রশস্ত রাস্তার পাশে), রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকা (৪০ ফুট ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ রাস্তার পাশে) দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি দেড় লাখ টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি কর হিসেবে দিতে হবে। ঢাকার গোড়ান (৪০ ফুট রাস্তার পাশে) হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় জমি কেনায় উৎসে কর হবে দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় সেটি।
মন্তব্য করুন