বগুড়ায় সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার পরও প্রতি বছর কমছে অর্থকরী ফসল পাটের চাষ। গত চার বছরে জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ কমেছে। কৃষকরা বলছেন, খরচ বেশি আর দাম কম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে, কৃষি বিভাগ বলছে, উন্মুক্ত জলাশয় কমে যাওয়ার কারণে পাট জাগ দেওয়া প্রধান সমস্যা, যার কারণে পাট চাষ প্রতি বছর কমে যাচ্ছে।
তবে এ বছর পাটের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার বগুড়ায় নতুন পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। গত বছর এ সময়ে পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বগুড়ায় ৭ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি। কিন্তু পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ কমার কারণে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চার বছর আগে ২০২১ সালে জেলায় পাট চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে চার বছরে পাট চাষ কমেছে ৩ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে।
জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চরে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। এ তিন উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। ভুট্টা, মরিচসহ অন্যান্য ফসল আবাদে কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ কমছে চাষিদের।
কৃষি বিভাগ বলছে, পাট চাষ বাড়াতে প্রতি বছর কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২০০ কৃষককে ১ কেজি বীজ ও ১০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে। তারপরও পাট চাষ কমছে।
সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের কৃষক আমিরুল আকন্দ জানান, গত বছর তিনি তার ছয় বিঘা জমিতে ৩০ মণ পাট পেয়েছেন। আগাম বন্যা হওয়ায় তিনি ভালো ফলন পাননি। কিন্তু এ বছর বন্যার আগেই তার ছয় বিঘা জমির পাট পরিপক্ব হয়েছে। তাই তিনি তার পাট কাটতে শুরু করেছেন। আশা করছেন ভালো দাম পাবেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলার চরের কৃষক জব্বার মিয়া জানান, তিনি এবার চরে ৪০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং আগাম বন্যা না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার মণপ্রতি ১ হাজার টাকা বেশি দামে নতুন পাট বিক্রি শুরু করেছেন।
একই উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, পাট চাষে প্রতি বছর খরচ বাড়ে। বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং পুকুরে মাছচাষ করায় পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি পাওয়া যায় না। আবার জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ আলাদা করতে শ্রমিক নিতে হয় বেশি দামে। এ কারণে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকার বেশি। ফলন ভালো হলে ৭-৮ মণ পাট পাওয়া যায়।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, পাট চাষ হয়ে ৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, পাট চাষের সবচেয়ে ভালো গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পাটখড়ি। কৃষকরা পাটের আঁশ বিক্রির পাশাপাশি পাটখড়ি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন এবং তাদের উৎপাদিত পাটখড়ি তারা সারাবছর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের পাট চাষ করতে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পাটের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় কৃষকরা পাট বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. সামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, পাট জাগ দেওয়ার মতো জলাশয় দিন দিন কমছে, পরিত্যক্ত পুকুরও আগের মতো নেই। মূলত জাগ দেওয়ার সমস্যার কারণে পাট চাষ কমে যাচ্ছে। জলাশয় ভরাট, পুকুরে মাছ চাষের কারণে কৃষকরা পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়েন।
মন্তব্য করুন