কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় অবস্থিত ভাসমান তেল ডিপো যমুনা অয়েল কোম্পানি ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বার্জ দুটি প্রায় ৪ বছর তেলশূন্য পড়ে আছে। এতে সেখানে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীসহ ডিপো-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির দুটি ভাসমান তেল ডিপো স্থাপিত হয়। ডিপো দুটির অনুমোদিত ২২ ডিলার সরকার নির্ধারিত দরে জ্বালানি কিনে খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহ করছিল। খুচরা বিক্রেতারা সামান্য মুনাফায় তেল বিক্রি করছিলেন। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি যমুনা অয়েল কোম্পানি ও ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের তেল শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ডিপো দুটিতে তেল আসছে না। তেলের দাম বৃদ্ধি ও ডিপো দুটি তেলশূন্য হয়ে পড়ায় পার্বতীপুর অথবা রংপুর ডিপো থেকে ১০৫ দশমিক ০৮ টাকায় কিনে সড়ক পথে তেল পরিবহন করলে ১ লরি অর্থাৎ ১৫ হাজার লিটার তেল আনতে পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ অতিরিক্ত খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা, যা প্রতি লিটারে প্রায় ১ টাকা ৫০ পয়সা বেশি। সব মিলিয়ে ডিলারদের তেল কিনতে হয় প্রায় ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর খুচরা বিক্রেতা থেকে কৃষকদের তেল কিনতে হচ্ছে ১১০-১১১ টাকায়। ভাসমান ডিপো দুটি উপজেলার জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটানোর পর পার্শ্ববর্তী নারায়ণপুর, যাত্রাপুর, সাহেবের আলগা, রৌমারী, রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী, জাফরগঞ্জ, কামারজানী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ মৌসুমে তেল সরবরাহ করে। প্রতিদিনের তেলের চাহিদা প্রায় ৭৫০ ব্যারেল বা ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন যন্ত্র চালানোর জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় ১০০ থেকে দেড়শ ব্যারেল বা ২০-৩০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি চরাঞ্চলে ব্যাপক ভুট্টা চাষের জন্য জমি চাষ ও সেচ মিলে প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিলাররা পার্বতীপুর বা রংপুর ডিপো থেকে তেল নিয়ে স্থানীয়সহ বিদ্যমান এলাকায় তেলের চাহিদা পূরণ করছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এতে প্রায় প্রতিদিন ৪-৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পড়ে থাকা বাকি অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে ডিপো দুটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেখানে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কর্মরত ১৭ কর্মচারীসহ প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জ্বালানি তেলের বাজার জোড়গাছ বাজারে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী বাদল, রাশেদুল, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথসহ অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় বাজারে আমরা প্রতি লিটার তেল ১০৬ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু দূর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। প্রতি লিটার ১০৫ দশমিক ০৮ টাকা দরের তেল আমাদের কিনতে হচ্ছে ১০৭ দশমিক ৫০ টাকায় এজন্য বেশি দামে তেল বিক্রি করছি। চিলমারী জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাদল বলেন, যমুনা ও মেঘনা ডিপো দুটি প্রায় ৪ বছর ধরে তেলশূন্য। এলাকার জ্বালানি তেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ডিপো দুটি কোম্পানির কাছে অবহেলিত হওয়ায় কৃষকরা চরম সংকটে রয়েছেন। আসন্ন সেচ মৌসুমের আগে ডিপো দুটিতে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড বার্জ ইনচার্জ মহশিন হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তেলে বিষয়ে হেড অফিস থেকে আমাকে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির এজিএম (ডিপো অপারেশন) জাহিদ মুরাদ বলেন, চিলমারীতে এখন তেল যাবে না। আর একটি ডিপো করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।