যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে ভারতের টেক্সটাইল, চামড়া, দামি পাথর ও রাসায়নিক শিল্পে বড় ধাক্কা লেগেছে। তবে বিচলিত না হয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ভারতের মোদি সরকার। এ সংকটকে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, ভারতের সাধারণ মানুষ ও লাখো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্য দীপাবলির উপহার হিসেবে আশীর্বাদরূপে এসেছে এ ব্যাপক শুল্কের বোঝা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার চাপ থেকে ভারতীয়দের কিছুটা স্বস্তির জন্য কর হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বিগত কয়েকদিনে একাধিকবার দেশি পণ্যে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বানও জানিয়েছেন মোদি।
দিল্লিতে স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে দেওয়া ভাষণে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের ‘স্বদেশি’ বা ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ (ভারতে তৈরি) সাইনবোর্ড টানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। এটা আমরা করব বাধ্য হয়ে নয়, বরং আত্মসম্মানের কারণে। বিশ্বে অর্থনৈতিক স্বার্থপরতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা নিজেদের দুর্দশা নিয়ে চোখের জল ফেলব না। আমরা সব বাঁধা ডিঙিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, যেন তাদের কেউ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল ও অস্ত্র ক্রয়ের কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আগের অন্যান্য শুল্কের সঙ্গে মিলে পরিমাণটি মোট দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। সেটা ২৬ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কারণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে হোয়াইট হাউসের অন্যতম মিত্র এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শুল্কের বোঝা বহন করছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। উল্লেখ্য, ভারত হচ্ছে বিশ্বের পঞ্চম ও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
বাড়তি মার্কিন শুল্কের কারণে, পোশাক থেকে হীরা এবং চিংড়ি পর্যন্ত বিপুল পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করার সঙ্গে জড়িত লাখো ভারতীয়র জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। তবে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্প থেকে স্বনির্ভরতার আহ্বানকে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মোদির পাল্টা জবাব হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতীয়দের প্রতি মোদির বার্তা খুব স্পষ্ট—দেশে পণ্য উৎপাদন করে দেশেই খরচ করুন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটির রুপির দরপতন, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা এবং রপ্তানির সম্ভাব্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষতির মুখে কেন্দ্রীয় সরকার এখন বহুমুখী কৌশল নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আইনি লড়াই, ঘরোয়া করছাড়, রপ্তানিকারকদের জন্য প্রণোদনা এবং বিকল্প বাজার অন্বেষণ।
মন্তব্য করুন