ইউক্রেনে শনিবার রাতে ৮০০-এর বেশি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল বলে টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এদিকে রাতভর রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন এলাকায় রাশিয়ার নজিরবিহীন হামলার পর নিজের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি প্যারিস বৈঠকে একমত হওয়া সিদ্ধান্তগুলোর সব প্রয়োগ করার জন্য মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাতের হামলায় কিয়েভে ৩২ বছর বয়সী এক নারী, তার দুই মাস বয়সী সন্তানসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘যখন বেশ আগেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, সে সময় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ইচ্ছাকৃত অপরাধ ও যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করার নামান্তর।’
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করা নিয়ে আরও আলোচনার জন্য এ সপ্তাহে প্যারিসে বৈঠকে বসেছিল ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’।
ইউক্রেনের পুলিশ বলেছে, কিয়েভের সভ্যাতোশিনস্কি এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে রাশিয়ার হামলার পর ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩২ বছর বয়সী এক নারী ও তার দুই মাস বয়সী ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ওই বৈঠকের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, ২৬টি দেশ ইউক্রেনকে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েন এবং দেশটির স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তদারকির বিষয়ও আছে।
মাখোঁর এ বক্তব্যের পরদিনই পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ইউক্রেনে মোতায়েন করা যে কোনো পশ্চিমা সেনা মস্কোর হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবেন।
গতকাল রোববার জেলেনস্কি লেখেন, ‘বিশ্ব চাইলে ক্রেমলিনের অপরাধীদের হত্যা বন্ধে বাধ্য করতে পারে। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার।’
এর মধ্যে গতকাল ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন, রোববার ভোরে রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভের মন্ত্রিসভা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সালে মস্কো দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম ভবনটি হামলার শিকার হলো।
রয়টার্স বলছে, এটা ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা। এতে কিয়েভের প্রধান সরকারি ভবনে আগুন ধরে যায়। রোববার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো যুদ্ধের মধ্যে এটি রাতে রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো টেলিগ্রাম অ্যাপে বলেছেন, ‘এই প্রথমবারের মতো শত্রুর আঘাতে সরকারি ভবনটির ছাদ ও ওপরের তলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে হামলা করা থেকে বিরত ছিল রাশিয়া। তবে এবার মন্ত্রিপরিষদ ভবনে হামলা নতুন ধাক্কা হয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি প্রতীকী আঘাত। এর মাধ্যমে রাশিয়া স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তি নিয়ে কথাবার্তা আসলে কেবল লোক দেখানো।
এদিকে ওই সন্ধ্যায় রুশ বাহিনীর হামলায় জাপোরিঝঝিয়া শহরে ১৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ইভান ফেদোরভ।
আর এ শহরের বাইরে নোভোপাভলিভকা গ্রামে ‘গ্লাইড বোমা’ হামলায় এক নারী নিহত হয়েছেন এবং এক ব্যক্তি এখনো নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন ফেদোরভ। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাতে ইউক্রেনের ছোড়া অন্তত ৬৯টি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে।
এসব ড্রোনের মধ্যে ২১টি ক্রাসনোদার ক্রাই, ১৩টি ভোরোনেজ ও ১০টি বেলগোরোদ অঞ্চলে ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি ড্রোনগুলো অপর কয়েকটি অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়। এ ঘটনার পর জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়ে পশ্চিমাদের সেনা পাঠানোর আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন