রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা যাবে চলতি বছরের চন্দ্রগ্রহণ। এই দিন পূর্ণচন্দ্রগ্রহণ হবে। গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যদি আকাশ মেঘমুক্ত থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকেও এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে।
চন্দ্রগ্রহণ কখন হয়?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একই রেখায় সূর্য ও চাঁদের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে যখন পৃথিবী আসে, কেবল তখনই চন্দ্রগ্রহণ হয়। এ সময় সূর্য দর্শকের পেছনে অবস্থান করার ফলে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় চলে যায়।
চন্দ্রগ্রহণের সময় কি গর্ভবতী নারীর সতর্ক থাকা উচিত?
আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন, চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীর সতর্ক থাকা উচিত, না থাকলে ক্ষতি হবে। কিন্তু ইসলামে এমন কোনো বিশ্বাস নেই। বরং চন্দ্রগ্রহণের সময় আল্লাহর প্রতি আরও বেশি নিবিষ্ট হওয়া, ইবাদত করা এবং তাঁর কুদরত নিয়ে চিন্তাভাবনা করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। অন্ধকার যুগে মানুষ মনে করত, দুনিয়ায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের জন্য কোনো অঘটন ঘটলে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয়। নবীজির (সা.) ছেলে ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মদের মৃত্যুর দিনে সূর্যগ্রহণ হলে সাহাবায়ে কেরাম তা বলাবলি করছিলেন। শুনে রাসুল (সা.) চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন। তিনি (সা.) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে, তাকবির বলবে, নামাজ আদায় করবে এবং সদকা প্রদান করবে।’ (বোখারি : ১০৪০, আবু দাউদ : ১১৭৭)
এ হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, চন্দ্রগ্রহণ কোনো অশুভ বা বিপদের নিদর্শন নয়। নবী (সা.) মানুষকে আল্লাহর সামনে সিজদাহ করতে ও দোয়া করতে বলেছেন। এটি শুদ্ধ চিন্তা, ধ্যান এবং দোয়ার সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
যা বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান
নাসা এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অপথালমোলজির তথ্য মতে, চন্দ্রগ্রহণের সময় কোনো ক্ষতিকর রশ্মি তৈরি হয় না, যা গর্ভবতী নারীর শরীর বা শিশুর জন্য হুমকি হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতে, এসব কুসংস্কারের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
লাইভ সায়েন্স-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ গর্ভবতী নারীর জন্য অন্য দিনের চেয়ে আলাদা কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না। শিশুর বিকলাঙ্গতা বা জন্মদোষ চন্দ্রগ্রহণের কারণে হয় না, বরং এগুলোর সঙ্গে জেনেটিক কারণ, অপুষ্টি, সংক্রমণ বা হরমোনজনিত সমস্যার সম্পর্ক আছে।
সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবার বা পানি দূষিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই খাবার খেলে গর্ভবতী ও শিশুর ক্ষতি হবে — এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ( নাসা, আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক)
কোরআনের ভাষায় চন্দ্রগ্রহণ
চন্দ্র-সূর্য মহান আল্লাহর অনন্য এক সৃষ্টি। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি সূর্যকে মাধ্যম বানিয়েছেন। চাঁদের মধ্যেও রেখেছেন মানুষের নানা উপকার। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করেই পৃথিবীতে সে স্নিগ্ধ আলো ছড়ায়। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সত্তা, যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জ্বল ও চাঁদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।’ (সুরা ইউনুস : ৫)
সুরা কিয়ামাতে রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে, তখন সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে’ (আয়াত : ৭-৯)। উল্লিখিত আয়াতে ‘চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’- এর বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ
সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত । ইসলামের পরিভাষায় এটিকে ‘সালাতুল খুসুফ’ বলা হয়। নবীজি (সা.) এ নামাজ আদায় করেছেন। ‘তাই সালাতুল খুসুফ’ আদায় করা সুন্নাত। (বোখারি : ৯৮৩)
কীভাবে পড়বেন
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ একাকী আদায় করাই সুন্নত। সূর্যগ্রহণের নামাজ জামাতে আদায় করার নিয়ম থাকলেও চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে তা সুন্নত নয়। তাই চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হওয়ার প্রয়োজন নেই। (বাদায়েউস সানাঈ : ১/২৮২)
কত রাকাত পড়বেন
যারা চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করবেন, তারা নিজ নিজ বাসায় ফজরের নামাজের মতোই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন। ইচ্ছা করলে চার রাকাত বা এর চেয়ে বেশিও পড়া যাবে, তবে প্রত্যেক দুই বা চার রাকাত পরপর সালাম ফেরাতে হবে। অন্যান্য নফল নামাজের মতো এ নামাজেও আজান-একামত নেই। নামাজ শেষে চন্দ্রগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিকির, দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকবে। (বোখারি, আল-মাবসুত, শারহুল বিকায়া)
মন্তব্য করুন