

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এখন ভিন্ন এক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপত্যকার বাসিন্দারা। ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অবিস্ফোরিত বোমার আকস্মিক বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। টানা দুই বছরের ইসরায়েলি বোমা হামলায় বিধ্বস্ত এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষ ও ত্রাণকর্মীরা ফেরায় এ হুমকি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
এখন এসব বোমার বিস্ফোরণে ফিলিস্তিনি শিশুরাও আহত হচ্ছে। অঞ্চলটিতে ২০ হাজার অবিস্ফোরিত ডিভাইস থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বোমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর নিজ এলাকায় ফিরে এসেছেন এক ফিলিস্তিনি পরিবার। তারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, ঠিক তার কাছে একটি অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান খুঁজে পেয়েছেন। আবাসিক এলাকায় তার মতো অনেকেই ফিরে এসে এমন ধাতব জট পাকানো ও বিপজ্জনক অস্ত্রও খুঁজে পেয়েছেন।
বসতি স্থাপনের কোনো জায়গা না থাকায় এবং গাজার বিশাল অংশ এখনো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দখলে থাকায় আইমান কাদোরাহ তার পরিবারের জন্য তাঁবু টানিয়েছেন একটি বিশাল সামরিক যন্ত্রের ওপর, যা স্থানীয়ভাবে ‘বিস্ফোরক রোবট’ নামে পরিচিত, যা পুরো এলাকার ব্লকগুলো সমতল করার জন্য ব্যবহৃত শক্তিশালী বোমা বহন করে। ইসরায়েল এমন দূর থেকে চালিত বিস্ফোরক রোবটগুলো বড় বড় ভবন গুঁড়িয়ে দিতে ব্যবহার করেছিল।
গাজায় অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের মারাত্মক ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিস (ইউএনএমএএস)। দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইউএনএমএএসের প্রধান লুক ডেভিড আর্ভিং বলেন, মানুষ ও মানবিক সহায়তাকর্মীরা যখন এসব এলাকায় চলাচল শুরু করেছে, তখন বিস্ফোরণের ঝুঁকি ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। অন্য সংঘাতের মতোই গাজাতে যুদ্ধ শেষ হলেও এসব বোমা সাধারণ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করে যাচ্ছে। আর্ভিং আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির ফলে আমরা যত বেশি এলাকায় প্রবেশ করতে পারছি ততই আরও বিস্ফোরক পাওয়া যাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির পর গত দুই সপ্তাহে অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণে বেশ কিছু শিশু আহত হয়েছে, যার মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এমন তথ্য দিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি এমন শত শত ঘটনার একটি উদাহরণ যেখানে শিশু ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বা আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
ইউএনএমএএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ৩২৮টি ঘটনায় মানুষ অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণের কারণে নিহত বা আহত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন