

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবওহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তীতে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
আবহাওয়ার দুই নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এদিন সন্ধ্যা ৬টায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর বিস্তৃত রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তরফে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের নতুন ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ তৈরির আভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। বর্তমানে সাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আগামী ২৬ অক্টোবর গভীর নিম্নচাপে এবং ২৭ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
আইএমডি জানায়, ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং এর প্রভাবে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। ঝড়টি প্রথমে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় আঘাত হানতে পারে। তবে দিক পরিবর্তন করলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা উপকূল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘মন্থা’ দিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই ভাষায় ‘মন্থা’ অর্থ ‘সুন্দর ফুল’। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)–এর অধীন উত্তর ভারত মহাসাগরীয় প্যানেলের সদস্য ১৩ দেশ পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করে থাকে—যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান ও মিয়ানমার অন্যতম।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফেনীতে; ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথারীতি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায়। সেখানে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও সিলেটে এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এদিন সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
মঙ্গলবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বুধবার রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এদিন সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে।
মন্তব্য করুন