

ন্যায্য ও সুশৃঙ্খল বহুমেরুর বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য অবদান রাখতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় শি এ মন্তব্য করেন। তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেন—যে দুই দেশেরই বহুপক্ষীয়তা বজায় রাখা উচিত। এ সময় ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনা প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান মাখোঁ।
এর আগে বুধবার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মাখোঁ বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পর চীনা প্রেসিডেন্ট তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। এটি মাখোঁর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চতুর্থ চীন সফর।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন যে শি মাখোঁকে বলেছেন— বিশ্বে বহুমেরুত্ব এবং মানবতার মধ্যে সংহতি, সহযোগিতা প্রচারে চীন ও ফ্রান্স উভয়ই স্বাধীন, দূরদর্শী, দায়িত্বশীল দেশ ও গঠনমূলক শক্তি। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন ফ্রান্সের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সংলাপ ও উন্মুক্ত সহযোগিতা বজায় রাখতে কাজ করতে প্রস্তুত।
ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সমর্থন জোগাড় করা ও ফ্রান্সে আরও চীনা বিনিয়োগ আনাই মাখোঁর এই তিন দিনের সফরের মূল লক্ষ্য। রাশিয়ার বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বললেও মস্কোর আগ্রাসন এখনো প্রকাশ্যে নিন্দা করেনি। বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, চীন শান্তির প্রচেষ্টা সমর্থন করে ও সব পক্ষ মেনে নিতে পারে এমন ন্যায্য, স্থায়ী ও বাধ্যতামূলক শান্তি চুক্তি চাই।
সংবর্ধনার পর মাখোঁ বলেন, ফ্রান্স ও চীনকে নিজেদের ‘পার্থক্য কাটিয়ে উঠতে’ হবে। শি একই সুরে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ‘আরও স্থিতিশীল’ হওয়া উচিত।
সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মূলত রাশিয়ার দাবিগুলোর প্রতিধ্বনি। আর মাখোঁ এই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পরিকল্পনার পাল্টা উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মাখোঁ বলেন, বিশ্বে ও ইউক্রেনসহ যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলগুলোয় শান্তি-স্থিতির জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। আমাদের সহযোগিতার সক্ষমতাই এখানে মুখ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চীন দ্রুত অন্তত একটি যুদ্ধবিরতিতে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধে সমর্থন দেবে।
আগামী বছর জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবেন মাখোঁ। তিনি বেইজিংকে আরও ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ন্যায্য’ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থার জন্য জি-৭-এর সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানান।
ইউক্রেন ইস্যুতে বাড়তি চাপ: মাখোঁর সফরের আগে প্যারিসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকও আলোচনায় আসে। ইউরোপকে কিয়েভের পাশে থাকার অনুরোধ জানান জেলেনস্কি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ অবসান পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, মাখোঁ চীনা প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট করে বলবেন, রাশিয়াকে যুদ্ধ চালাতে কোনোভাবেই কোনো ধরনের সহায়তা করা যাবে না।
বাণিজ্য ও পান্ডা কূটনীতি: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চীনের ৩৫৭ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। মাখোঁর আলোচনার আরেকটি প্রধান বিষয়। মাখোঁর এক উপদেষ্টা বলেন, চীনের বেশি ভোগ ও কম রপ্তানি করা জরুরি। আর ইউরোপীয়দের কম সঞ্চয় ও বেশি উৎপাদনে মনোযোগী হওয়া দরকার।
আগেও মাখোঁ চীনের ওপর ইইউ নির্ভরতা কমানো এবং প্রযুক্তি খাতে ‘ইউরোপীয় অগ্রাধিকার’ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন। গত মাসে ইউরোপীয় নেতাদের এক প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রযুক্তি কোম্পানির ‘ভ্যাসেল’ হতে চায় না।
মাখোঁ চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এরপর যাবেন চেংদুতে, যেখানে আগে ধার হিসেবে ফ্রান্সে পাঠানো দুই দৈত্যাকার পান্ডাকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। চীন জানিয়েছে, নতুন পান্ডা পাঠানো হবে দ্রুতই। শি বলেন, পান্ডা সংরক্ষণে ফ্রান্স-চীন নতুন চুক্তিতে পৌঁছেছে।
মন্তব্য করুন