

ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আসন্ন বলে প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসন কিছুদিন ধরে মাদক পাচারের অজুহাতে সেখানে সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে সেখানে পেন্টাগন ঘোষিত ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ অনুযায়ী সেনা ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি লাতিন আমেরিকার দেশটির আকাশসীমাও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর মধ্যে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যে কোনো সময় ভেনেজুয়েলায় হামলা হতে পারে। হামলা হচ্ছে ক্যারিবীয় সাগরে থাকা নৌযানেও। এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এতে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, শিগগির দেশটিতে মার্কিন হামলা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানান, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল সমৃদ্ধ দেশ ভেনেজুয়েলায় যে কোনো সময় হামলা চালাবে পেন্টাগন। তার দাবি, লাতিন আমেরিকার দেশটির ভেতরে থাকা মাদক সাম্রাজ্যের অবকাঠামো এ হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে।
ট্রাম্পের এমন হুঁশিয়ারির দুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ভেনেজুয়েলায় ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। দেশটিতে থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ নির্দেশনা দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ভুলভাবে আটক হওয়া, আটক অবস্থায় নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, স্থানীয় আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ, অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই দেশটিতে ভ্রমণ এবং সেখানে অবস্থান না করতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও আইনগত স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়তে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ সতর্কবার্তা এলো এমন এক সময়, যার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রে এক প্রাণঘাতী হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইউএস সাউদার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এ নৌযানটি একটি ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনের’ সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে দাবি করা হয়, নৌকাটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরপথে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল। এক্সে দেওয়া পোস্টে সাউদার্ন কমান্ড জানায়, নৌকায় থাকা চার পুরুষ ‘মাদক সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বহু ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতির নৌকাটি আচমকা একটি প্রবল বিস্ফোরণে আঘাত পেয়ে আগুনে ঘিরে যায়।
ঘটনাটি এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত মাদকবিরোধী সামরিক অভিযানের অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এ অভিযান নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে। কারণ, এতে নিহতের সংখ্যা এখন ৮৫-এর বেশি ছাড়িয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার জেরে একযোগে ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি বাতিল করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে মার্কিন সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলার কারাকাসগামী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করেছিল এ এয়ারলাইনগুলো। পরে ভেনেজুয়েলা তাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২৭ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ হওয়া এয়ারলাইনগুলো হলো—আইবেরিয়া, টিএপি পর্তুগাল, গোল, লাতাম, অ্যাভিয়াঙ্কা এবং টার্কিশ এয়ারলাইনস। ভেনেজুয়েলার এ সিদ্ধান্তে হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু ছোট ছোট এয়ারলাইন এখনো দেশটিতে যাতায়াত করছে।
সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ঘিরে এ উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটন বলছে, এ অভিযান মাদকবিরোধী তৎপরতার অংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এত বড় সামরিক উপস্থিতি সাধারণত দেখা যায় না।
এদিকে মার্কিন হামলা ঠেকাতে পাল্টা সেনা মোতায়েনও করেছে ভেনেজুয়েলা। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো এর আগে জানিয়েছেন, তার বহির্শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে গেরিলা কৌশল নেবে। বিশ্লেষকরা এ পরিস্থিতিকে একটি বড় সংঘাতের আশঙ্কা হিসেবে দেখছেন।
মন্তব্য করুন